বগি দা বানাতে অস্বীকার করায় লালমোহনে কামারকে পিটিয়ে জখম
লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি
ভোলার লালমোহন উপজেলায় অবৈধ দেশীয় অস্ত্র বগি দা বানিয়ে না দেওয়ায় কামারকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত রুবেল চন্দ্র কর্মকার নামে ওই কামার গত দুইদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরআগে সোমবার রাতে উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের লর্ডহার্ডিঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
তখন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেন রুবেল। তবে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে তাকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত কামার রুবেল লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্নদা প্রসাদ এলাকার সরকারি পুকুর পাড়ের বাসিন্দা নিখিল চন্দ্র কর্মকারের ছেলে।
আহত রুবেল চন্দ্র কর্মকারের ভাই জুয়েল চন্দ্র কর্মকার জানান, লর্ডহার্ডিঞ্জ বাজারে আমাদের কামারের দোকান। গত সোমবার রাতে ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক রতন চৌধুরীর ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মেহেদি দোকানে এসে একটি ভারি লোহার রড বের করে তা দিয়ে আমার ভাই রুবেলকে চারটি বগি দা বানিয়ে দিতে বলেন। এতে আমার ভাই অস্বীকৃতি জানালে তাদের দুইজনের ভেতর কথা কাটাকাটি হয়। পরে তিনি আমার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তখন আমার ভাই রুবেল দোকান থেকে বেরিয়ে সেখানে গেলে মেহিদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। তখন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীসহ বাজারের ব্যবসায়ীরা আমার ভাই এবং বাবাকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। এরপর তাদের কথা মতো আমার ভাই বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে লর্ডহার্ডিঞ্জ বাজারের দক্ষিণ মাথায় গিয়ে একটি দোকানে চা খেতে ঢুকেন। পরে সেখানে মেহেদির নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে আমার ভাইকে হকিস্ট্রিক দিয়ে বেধড়ক মারধর করে ফেলে রেখে চলে যায়।
জুয়েল চন্দ্র কর্মকার আরো জানান, এরপর খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমার বাবা এবং আমিসহ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করাই। এরপর সেখান থেকে তাকে বাড়ি নিই। তবে সকালের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আবার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। দুই দিন ধরে আমার ভাই রুবেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ অভিযোগের ব্যাপারে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মেহেদি বলেন, মজার ছলে আমি রুবেলকে বলেছি; আওয়ামী লীগের আমলে তো অনেক বগি দা বানিয়ে দিছিলি, এখন আমাদেরও কিছু বগি দা বানিয়ে দে। সে এতে রাজি না হওয়ায় তার বাবাকেও একই কথা বলি। ওই সময় রুবেল তার মোবাইল দিয়ে আমাদের কথাবর্তার ভিডিও করে। যার জন্য আমি তার মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দিই। এরপর তারা আমাকে মারধর করে। বিষয়টি আমার সঙ্গের লোকজন জানতে পেরে তারা গিয়ে পরবর্তীতে রুবেলকে মারধর করে।
কামারকে মারধরের অভিযোগের ব্যাপারে মেহেদির বাবা ও ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রতন চৌধুরী জানান, রুবেলসহ কয়েকজন মিলে প্রথমে আমার ছেলেকে মারধর করেছে। এরপর আমার ছেলে তাদেরকে মারধর করেছে। তবে তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা এরইমধ্যে টাকা দিয়েছি। রুবেল সুস্থ্য হলে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে জিএম বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য জানতে বলেছি। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় এসে মামলা দিতেও বলা হয়েছে। তারা অভিযোগ বা মামলা দিলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।