ডার্ক মোড
Sunday, 27 April 2025
ePaper   
Logo
ফরিদপুরের তিন গুণীজন হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত

ফরিদপুরের তিন গুণীজন হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরে প্রথমবারের মতো তিনজন গুনি ব্যক্তিকে তিনটি ক্যাটাগরিতে হুমায়ুন কবির পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গবেষণায় ড. মোহাম্মদ আলী খান, কথা সাহিত্যে তাপস কুমার দত্ত ও সাংবাদিকতায় সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম এই পুরস্কারে ভূষিত হোন। এ সময় তাঁদের প্রত্যেককে সম্মাননা ক্রেস্ট ও পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেয়া হয়।

ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার(৭ ফেব্রুয়ারী) বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।

অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজনই উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে এই তিন ব্যক্তির কর্মপরিধি সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। পরে তাঁদের হাতে পর্যায়ক্রমে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে জালাল আহমেদ হুমায়ুন কবিরের বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হুমায়ুন কবির ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা ও একজন মহাপুরুষ। তিনিই একমাত্র অক্সফোর্ড থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং দর্শনে অনার্স করেছেন যা উপমহাদেশে প্রথম ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রগতিশীল ছিলেন। তিনি ভারতের দুইবার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন, তিনি ৪৭ টি বই লিখেছেন। তার লেখা নদী ও নারীর কথা বেশ আলোচিত। আমরা এতটুকু দিয়ে হুমায়ুন কবিরকে পরিমাপ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এর বাইরে যে হুমায়ুন কবিরের পরিচিত আছে সেটা আমরা লক্ষ করি না। ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদকে ধন্যবাদ জানাই যে এই বিখ্যাত মানুষটিকে নতুন করে তুলে আনার জন্য।

এ সময় ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাঙালির যে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস ও কিছু মানুষ ছিল তাঁদেরকে আমরা জনসম্মুখে, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখিনা। ঠিক সেই মুহুর্তে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ যেটি করেছে সেটাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করবে, বাংলাদেশ আবার মাথা তুলে দাড়াবে। কাজেই, আমাদের যার যতটুকু শক্তি আছে সে ভাল কাজের সাথে থাকব।’

অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক অধ্যাপক এম এ সামাদ, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও দৈনিক ফতেহাবাদ সম্পাদক প্রফেসর এবিএম সাত্তার, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর আলতাফ হোসেন, সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার সদস্য সচিব মো: হাসানুজ্জামানসহ সাহিত্য সংস্কৃতি অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন।

পুরস্কার পাওয়া ড. মোহাম্মদ আলী খান একজন কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, ভ্রমণকাহিনী ও শিশুতোষ গ্রন্থের প্রণেতা এবং একজন গবেষক। তার অক্লান্ত শ্রমনিষ্ঠ ‘বর্ণে শব্দে চিত্র: ফরিদপুর’ বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঠক সমাজকে অভিভূত করেছে। এছাড়া তার লেখায় অনবদ্য ভঙ্গিমায় চিত্রিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, প্রকৃতির প্রতি অফুরান ভালবাসা ও শাশ্বত মানবপ্রেম, বর্ণ ও শব্দের সুঁই-সুতোয় কাগজের নকশীকাথায় ফুটিয়ে তুলছেন। বই রচনার পাশাপাশি তিনি একাধিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও যুক্ত ছিলেন।

কথাসাহিত্যিক তাপস কুমার দত্তের মহাপৃথিবীর অন্ধকার ঘাসে উপন্যাস বিস্ময়করভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজনৈতিক পাঠকে। যেখানে প্রতিকীভাবে এক ন্যানো এলিয়েনের আশ্রয় ঘটেছে। বিচিত্র কৌশলে উঠে এসেছে বাংলাদেশের আবহমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কঠিন বয়ান। উপন্যাসের পাশাপাশি রয়েছে তার গল্প সংকলন। এছাড়া তিনি একজন চলচ্চিত্রকার।

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম ২০০৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দেশের প্রথম ২৪ ঘন্টার সংবাদ টেলিভিশন চ্যানেল সিএসবি নিউজ এ শুরু হয় তার পেশাজীবন। বর্তমানে তিনি প্রথম আলো পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দেশের সৃজনশীল সংস্কৃতি মাধ্যমে দুর্নীতি ও উপকূলে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব নিয়ে রয়েছে তার অসামান্য প্রতিবেদন। তার প্রতিবেদনে সুন্দরবনের সবচেয়ে দুর্গম এলাকার চিত্র উঠে এসেছে। তিনি ২০১৮ সালে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ-ভারত’ কথাসাহিত্য পুরস্কার।

নিজ জেলা শহরে প্রথমবারের মতো এমন পুরস্কার পেয়ে আবেগাপ্লূত হয়ে অভিব্যক্ত প্রকাশ করেন তাঁরা। পুরস্কার পেয়ে সাংবাদিক সাদিয়া মাহ্জাবীন বলেন, নিজের শহর থেকে পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত। অন্যান্য পুরস্কারের তুলনায় এতগুলো স্বজনের মাঝে পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য সারাজীবনের গর্ব।

প্রসঙ্গত, হুমায়ুন কবির ফরিদপুর সদরের কোমরপুর গ্রামে ১৯০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুরের অনন্য মাত্রার শিল্পীপুরুষ, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও রাজনীতিক ছিলেন। ১৯৩৯ সালে জমিদারপুত্র আবদ আল্লাহ জহীরউদ্দিন লালমিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ। এই সাহিত্য পরিষদের আমন্ত্রণে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুর এসেছিলেন সাহিত্য সভায় যোগ দিতে।

এর আগে ফরিদপুর প্রেসক্লাব,ফরিদপুর মুসলিম মিশন কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিথিদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন