প্লাস্টিক ব্যবহার ও বাস্তবতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইউনিডো) এবং বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) আয়োজিত প্লাস্টিক ব্যবহার ও বাস্তবতাবিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৪-এর ফাইনাল বিতর্ক ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্লাস্টিক পণ্যের টেকসই ব্যবহার অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়। পাশাপাশি প্রতিযোগিতার শেষদিনে কর্মশালায় অংশ নেয় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।
ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো দল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট অর্গানাইজেশন চ্যাম্পিয়ন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি রানার আপ হয়। বিজয়ী দলের প্রাপ্তি দে তাপসী ফাইনালের সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে পরিবেশবান্ধব টেকসই উদ্যোগে তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের দায়িত্বশীল নাগরিক। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিকের যথাযথ ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা। এটি মোকাবিলার জন্য শুধু সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে না, বরং আমরা শিক্ষার্থীদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দেওয়া এবং সমালোচনামূলক চিন্তা দক্ষতার বিকাশের মাধ্যমে একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলছি যাতে তারা দায়িত্বশীল নাগরিকে পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন। এসময় তিনি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজনে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত। তরুণপ্রাণকে সক্রিয়ভাবে এই ধরনের সমালোচনামূলক বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত দেখতে পারাটা উৎসাহব্যঞ্জক এবং আমি বিশ্বাস করি যে তারা আমাদেরকে একটি স্বাস্থ্যকর ও নির্মল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এসময় শিক্ষার্থীদের বিপুল সাড়া এবং গঠনমূলক চিন্তাভাবনা দেখে আনন্দ প্রকাশ করে হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন আরো বলেন, বিতর্ক করে, আপনি শুধু একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছেন না – আপনি সমাধানের অংশ হয়ে উঠছেন। আমি আত্মবিশ্বাসী যে শিক্ষার্থীরা আজ এখানে যে ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন তা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নীতি ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়নে অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ইউনিডো বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাকি উজ জামান প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় তাদের অঙ্গীকার তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা জাগ্রত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে টেকসই প্লাস্টিকের যথাযথ ব্যবহারের বহুল প্রসারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পখাতের উন্নয়ন জরুরি। চলমান প্রতিযোগিতায় বিতর্কের সব যুক্তি-প্রতিযুক্তির মধ্য দিয়ে এই বিষয়গুলিও সামনে এসেছে, যা পরিবেশ-ভাবনায় বর্তমানের তরুণদের সংবেদনশীলতাকে ফুটিয়ে তোলে। এই ধরনের বিতর্কে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে, আমরা নিশ্চিত করছি যে তারা সক্রিয় এবং সচেতন নাগরিক হয়ে উঠবে, এবং ভবিষ্যতে প্লাস্টিক দূষণ এবং প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। তিনি আগামীতে প্লাস্টিক ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে ইউনিডো, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিডিএফ-এর মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং বিডিএফের সাবেক সভাপতি ডা. আবদুন নূর তুষার ভবিষ্যৎ নেতাদের গঠন এবং রাষ্ট্রীয় নীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বিতর্কের মুখ্য ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি মন্তব্য করেন, বিতর্ক শুধু একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের চেয়েও বেশি কিছু; এটি সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়। বিতর্কের মাধ্যমে, তরুণ মন জটিল বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে, তাদের ধারণাগুলো প্রকাশ করতে এবং পরিবর্তনের পক্ষে সমর্থন করতে শেখে। এই দক্ষতাগুলো শুধু তাদের ব্যক্তিগত বিকাশে পথ দেখাবে না বরং আমাদের জাতির জন্য আরও টেকসই এবং দায়িত্বশীল ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করবে এমন নীতি গঠনে অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার এবং সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধের জন্য একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও বিতার্কিকদের প্রস্তুতির প্রশংসা করে ড. মামুন আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কিত সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানে তরুণ মনকে যুক্ত করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।
প্রতিযোগিতাটি ‘বাংলাদেশে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার এবং সামুদ্রিক লিটার প্রতিরোধের প্রতি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক বৃহত্তর প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউনিডো এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক যৌথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঢাকায় রয়্যাল নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে নরওয়ে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চলমান এই প্রকল্পের লক্ষ্য বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলা করা।
অনুষ্ঠানের সমাপনী ও সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের (বিডিএফ) সভাপতি প্লাবন গঙ্গোপাধ্যায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্বের প্রস্তুতি ও বিকাশের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে। পাশাপাশি তিনি আরও টেকসই এবং ন্যায়বিচারপূর্ণ বিশ্ব গঠনের চালিকা শক্তি হিসেবে দৃঢ় ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিপুল সাড়াকে সাধুবাদ জানান।
বিডিএফের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তর ও দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিডোর প্লাস্টিক রিসাইক্লিং অ্যান্ড কনজিউমার অ্যাওয়ারনেস বিষয়ক জাতীয় বিশেষজ্ঞ মাহবুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়ক সত্য ভট্টাচার্য, বিডিএফের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাহমুদুল আলম রাসেল, নাশীর উদ্দিন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নাইম মাহমুদসহ আরো অনেকে।