ডার্ক মোড
Thursday, 19 September 2024
ePaper   
Logo
দোহারে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত

দোহারে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত

দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি

ঢাকার দোহার উপজেলায় টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে ও রোববার সন্ধ্যার দিকে ঝড়ে বেশ কয়েকস্থানে গাছপালা ভেঙ্গে বাড়িঘর ও টিনের চাল উড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের জনজীবন। উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় দিনরাত একাধারে মুসলধারে বৃষ্টির ফলে বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের লোকজন।বাইরে ও সড়কে পানি জমে থাকায় ঠিকমতো বাইরে বের হতে পারছেন না স্থানীয়রা। হাট-বাজার রাস্তা-ঘাট বৃষ্টির পানিতে থই থই। ছোট থেকে বড় সব ধরনের যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে ঢাকা-দোহার মহাসড়কে। অটোরিকশা-ভ্যান, অটোবাইক চালকরা হাত গুটিয়ে নিজ গাড়িতে বসে সময় পার করছেন। বাজারে দোকান পাট খুলতে পারছে না সকল প্রকার ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকে দোকান খুললেও ক্রেতা নেই অভিযোগ দোকানীদের।

রোববার দুপুর ১ টার দিকে সুতারপাড়া নিবাসী অটো চালক নুরুল ইসলাম বলেন, তিন দিন যাবৎ একধারে বৃষ্টি হচ্ছে, সকাল থেকে গাড়ি নিয়ে জয়পাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোন যাত্রী পাঁচ্ছি না,বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘরের বাহির হচ্ছে না। ভাড়া মারতে না পারলে চলবো কি করে। মেঘুলা হাট-বাজারে বসে থাকা কয়েকজন রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকের সাথে কথা বললে জানান, বৃষ্টির জন্য কাজ পাঁচ্ছেন না তারা। বৃষ্টির কারণে তাদের অবস্থা অনেকটা খারাপ।

নারিশা, মুকসুদপুর, সুতারপাড়া, বিলাসপুর,কুসুমাটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণেই স্থবিরতা বিরাজ করছে জনজীবনে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রাস্তা ঘাটে মানুষে আনাগোনা কম থাকায় তারাও পড়েছেন চরম বিপাকে। এ ছাড়াও টানা বৃষ্টিতে ইউনিয়নের বিভিনস্থানে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির কারণে আড়িয়ল বিল এলাকায় ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। সকালে অফিসগামী মানুষও এই বৃষ্টির বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়নি। বৃষ্টিতে রিকশা চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে রিকশা ও অটোভাড়াও বেশি দিতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। সবজি ও মাছ বাজারে ফাকাঁ,ক্রেতা নেই।

পৌরসভার সড়ক গুলোতে পানি জমে থাকার কারনে চলচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।সুতারপাড়া ও ডাইয়াকুম এলাকায় বেশ কয়েকটি পাকাঁ সড়ক ধ্বসে পড়েছে।ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

সুতারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বিনা ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিনের বাড়ি সংলগ্ন ২৫০ মিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মান ও বৃষ্টির পানি অপসারন করতে ৭৮ লাখ টাকা ব্যায়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজে অনিয়ম করায় সড়কটি এখন বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।ফলে এই অঞ্চলে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি জমে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্থানীয়দের আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি। এ ঘটনায় তারা উপজেলা এলজিইডি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করছেন। সরকারী অর্থ লুটপাট করতে নতুন রাস্তা নির্মান করে এবং সড়কের পাশেই নালা খনন করে এ টাকা লুটপাট করেছেন চেয়ারম্যান।

সুতারপাড়া অস্থায়ী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট ড্রেনেজ নির্মান করায় অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। এই এলাকাটিতে প্রায় ৪ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে।এখানেও সড়ক নির্মান ও ড্রেনেজ নির্মানে অনিয়ম করেছেন চেয়ারম্যান। বর্তমানে এলাকাটি খুবই ঘনবসতি হওয়ায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না জলবদ্ধতার কারনে। অনেকের বাসা বাড়ির মধ্যে পানি আর পানি। পানি নামবার জন্য উপজেরা ও পৌরসভার অর্থায়নে বেশ কয়েকটি ড্রেন নির্মান করেছে চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন। বর্তমানে সবই বিফলে হয়ে দাড়িয়েছে। এসকল ড্রেন দিয়ে পানি নিস্কাসন হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ড্রেনগুলি ২০২২/২৩ সালে অনিয়মে নির্মান করলেও তা এখন মাটি এবং ময়লা-আবর্জনা পড়ে ভরাট হয়ে গেছে।

প্রতি বছর এলাকায় জলবদ্ধতা হয়,অথচ এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আবাসিক এলাকায় কোথাও কোথাও প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে রয়েছে। পায়ের জুতা ভিজিয়ে পথ চলতে হয়েছে অনেক পথচারীকে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক পুরাতন ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সব রাস্তায় উঠে এসেছে। এতে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে পথ দিয়ে অনেকের হাঁটাও সম্ভব হয় না। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সকল ইউপি চেয়ারম্যানরা গা-ঢাকা দিয়েছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন