
দোরাইস্বামীকে শিখ উপাসনালয়ে যেতে বাধা, ব্রিটিশ গুরুদুয়ারার নিন্দা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীকে শিখ উপাসনালয়ে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটিশ গুরুদুয়ারা। এছাড়া সেই ঘটনাটিকে ‘উশৃঙ্খল আচরণ’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে।
দিন দু’য়েক আগে স্কটল্যান্ডের গুরুদুয়ারায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীকে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। রোববার (১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীকে শিখ উপসনালয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে ‘উশৃঙ্খল আচরণ’ বলে অভিহিত করে নিন্দা করেছে স্কটল্যান্ডের গুরুদুয়ারা।
গ্লাসগো গুরুদুয়ারা গুরু গ্রন্থ সাহিব শিখ সভা এক বিবৃতিতে বলেছে, পুলিশ এই বিষয়ে তদন্ত করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গ্লাসগো এলাকার বাইরে থেকে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি এই সফরে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করেছিল, যার কারণে পরে পরিদর্শনকারী দল গুরুদুয়ারা প্রাঙ্গন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’
বিবৃতিতে গুরুদুয়ারা আরও বলেছে, ‘দর্শনার্থীরা চলে যাওয়ার পরে, এই ব্যক্তিরা গুরুদুয়ারা মণ্ডলীকেও বিরক্ত করতে থাকে। স্কটল্যান্ডের পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল এবং তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। শিখ উপাসনালয়ের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্য এই ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের তীব্র নিন্দা করছে গ্লাসগো গুরুদুয়ারা। এই গুরুদুয়ারা সমস্ত সম্প্রদায় ও মানুষের জন্য উন্মুক্ত এবং আমরা আমাদের বিশ্বাসের নীতি অনুসারে সবাইকে স্বাগত জানাই।’
এর আগে গত শুক্রবার বিক্রম দোরাইস্বামীকে স্কটল্যান্ডের একটি গুরুদুয়ারায় প্রবেশ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়। ভারতীয় হাইকমিশনারকে গুরুদুয়ারা পরিচালনা সমিতির কয়েক জন সদস্য জানিয়ে দেন, তিনি সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরে বিক্রম দোরাইস্বামী ফিরে যান।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, খালিস্তানপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী ভারতীয় সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর সমর্থকরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ কয়েকটি দেশে সক্রিয় রয়েছে এসএফজে। ভারতের পাঞ্জাবে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে তারা।
যদিও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শিখস ফর জাস্টিসকে (এসএফজে) পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার।
এদিকে এই ঘটনার ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন শিখ বিক্রম দোরাইস্বামীকে একটি গুরুদুয়ারার সামনে আটকে রেখেছে। সেই বিক্ষোভকারীদের বলতে শোনা যায়, ‘আমরা জানি ভারতীয়রা কী করছে। কানাডায় কী হচ্ছে সব জানি আমরা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করেছেন। এই ভারতীয়রা কানাডায় শিখদের মারছে। বিশ্বের যেখানে যত শিখ আছে, তাদের সবার উচিত ভারতের রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা।’
অবশ্য এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে এটিকে ‘অসম্মানজনক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে লন্ডনের ভারতের হাইকমিশন। ‘শিখ ইয়ুথ ইউকে’-এর ইনস্টাগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিও অনুসারে, খলিস্তানিপন্থি এক কর্মী আলবার্ট ড্রাইভে গ্লাসগো গুরুদুয়ারায় প্রবেশ করতে দোরাইস্বামীকে বাধা দেয়। খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা নিয়ে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কানাডার শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। হাউস অব কমন্সের সভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার মতো ‘বিশ্বাসযোগ্য কারণ’ রয়েছে।
ভারত অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এছাড়া ভারত ২০২০ সালে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে ঘোষণা করে এবং নিজ্জারকে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর আনা অভিযোগটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে নয়াদিল্লি।
এছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর এই অভিযোগ সামনে আসার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার একপর্যায়ে উভয় দেশ একে অপরের একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং পরে কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করে ভারত।