দুধবিক্রেতা জসীমের, সব্জীবিক্রেতা মধুর, মুলিরকারিগর আনারের সন্তান ঢাবিতে
মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
কৃষ্ণপুর গ্রামের দুধ বিক্রেতা জসীম উদ্দীনের ছেলে,একই গ্রামের কাঁঠালতলী বাজারের তরিতরকারী বিক্রেতা মতিউর মধু মিয়ার মেয়ে,ও একই গ্রামের মুলির কারিগর আনার উদ্দীনের ছেলে পড়ছে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দুধ বিক্রেতা জসীম উদ্দীনের ছেলে এমরান এই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ।কৃষ্ণপুর গ্রামের জসীম উদ্দীন সাইকেলে করে নিত্যদিন এলাকার বাড়ী বাড়ী ঘুরে দুধ কিনে আনেন।আবার সে দুধ প্রতিদিনই বাজারে বাজারে ঘুরে চায়ের দোকানে বিক্রি করেন।
সারাদিন এসব করে রাতে বাজারে বাজারে দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রিত দুধের টাকা তুলেন।শীত রোদ বৃষ্টি ঝড় কোনকিছুতেই থেমে নেই তার কাজ। এতে দৈনিক ৪/৫ শো টাকা ব্যবসা হয় তার।এ আয় দিয়ে ছেলে এমরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার খরচসহ ৬ জনের সংসারের খরচ চলে তার।জমাজমি বলতে কিছুই নেই।পড়াশোনা শেষে ছেলেকে নিয়ে জসীম উদ্দীনের প্রত্যাশা কি জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।কান্নার জন্য তিনি কোন কথাই বলতে পারেননি।
পাইকারী দরে তরিতরকারী কিনে এনে বৈকালিক হাটে খুচরো দরে বেচেন একই গ্রামের মতিউর রহমান মধু।জমাজমি কিছুই নেই বলতে গেলে।কায়ক্লেশে দিন চলে তার ৪ জনের সংসার নিয়ে।তার মেয়ে আবেদা সুলতানা মিলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।মতিউর রহমান মধু অনেক কষ্টে মিলির পড়াশোনার খরচসহ সংসারের খরচ জুগিয়ে চলেছেন।তার আশা মিলি পড়াশোনা শেষ করে মানুষের মতো মানুষ হবে।
একই গ্রামের মুলির কারিগর আনারের ছেলে আক্তার হোসেন পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সে। মুলির বেড়ার অর্ডার নিয়ে সেসব বুনে বেচে ছেলের পড়াশোনার খরচ জুগানোসহ ৫ জনের সংসার চলে তার।জমাজমি আছে খুবই সামান্য।ছেলে নিয়ে আনারের প্রত্যাশা পড়াশেনা শেষে সে ভালো একটি চাকুরী থেকে হালাল কামাই রোজগার করবে।আর তা থেকে দু তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখবে ও এক তৃতীয়াংশ দান খয়রাত করবে।তা' থেকে নিজের জন্য কিছুই চান না আক্তার ।
কাকতালীয়ভাবে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীদের সবারই জেলা উপজেলা গ্রাম ওয়ার্ড এক।তারা সবাই নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রাম ও এর ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা।তাদের শিক্ষার্থীরা সবাই পড়াশোনা করেছেন কৃষ্ণপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।আর্থিক ও সঙ্গতির মূল্যায়নে দুধ বিক্রেতা জসীম ভাই,হাটে তরিতরকারী বিক্রেতা মধু ভাই ও মুলির কারিগর আনার ভাই সবাই নিম্নআয়ের সাধারন মানুষ।
কিন্তু তাদের অসাধারনত্ব তাদের সন্তানেরা সাধারন ঘরের মানুষ হয়েও মেধা কোটায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একেকজন।আশা করা যায়, তারা তাদের শিক্ষার্থী জীবন শেষে আদর্শবান মানুষ হয়ে পরিবারের এ কষ্ট দূরীকরনে সততা ও নিষ্টার সাথে অবদান রাখতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।