ডার্ক মোড
Tuesday, 07 January 2025
ePaper   
Logo
চিলমারীতে করুশ কাটার কাজ করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন নুরজাহানের

চিলমারীতে করুশ কাটার কাজ করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন নুরজাহানের

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

তিন বছর আগে ছেলের ঈদ সালামীর ৪ হাজার টাকা দিয়ে সুতা কিনে হাতের কাজ শুরু করেন। এরপর তেমন সাড়া না মিললেও এখন মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এই নারী উদ্যোক্তা। কুরুশ কাটার কাজ শুরু পর স্থানীয় নারীদের বাড়ি বাড়ি ডেকে এনে কাজ শিখেছেন এখন তাদের দিয়েন অর্ডারের কাজ করিয়ে নিচ্ছে এই নারী উদ্যোক্তা। এখন সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে এই নারী উদ্যোক্তা। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা মিয়া বাড়ি এলাকার মো. আসিফ ইকবালের সহধর্মিণী নুরজাহান বেগম।

নারী উদ্যোক্তা নুরজাহান বেগম মায়ের কাছে কুরুশকাটার কাজ শিখেছেন প্রথমে। এরপর স্বল্প পরিসরে নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করতেন বিভিন্ন ধরনের সুতার পন্য। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে বেশ ভালো সাড়া পেতে থাকলে ছেলের ঈদ সালামীর চার হাজার টাকা দিয়ে সুতা কিনে বানিজ্যিকভাবে শুরু করেন এই ব্যবসা। এরপর প্রথম দুই বছরে নিজের সামান্য মুনাফা দিয়ে চলছিল তার কুরশিকাটার ব্যবসা। পরের বছর বেসরকারি সংস্থার ২২ হাজার টাকা পান। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে পুরো উদ্যমে শুরু করে ব্যবসা। তিন বছরের প্রায় লাখ টাকা আয় করেছেন এই নারী উদ্যোক্তা। এখন তিনি শুধু নিজ এলাকায় নয় অনলাইনের মাধ্যমে এই সব পণ্য বিক্রি করছেন বিভিন্ন জেলায়। এই নারী উদ্যোক্তা নুরজাহান বেগম জানান, চাহিদা বেশি হওয়ায় নিজ এলাকার নারীদের ফ্রিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এখন তার তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন ওই এলাকার প্রায় ১০ থেকে ১২ নারী। কাজ শিখে এখন অর্ডারের কাজও করেন কলি নামে এক নারী। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের হাত খরচের টাকা চালাতে পারে নিজেই।

কলি খাতুন বলেন, নুরজাহান বেগম দীর্ঘদিন থেকে কুরুশ-কাঁটার কাজ করেন। একদিন এখানে এসে দেখি ইনি কাজ করছেন। পরে সেখান থেকে এই কাজ শিখার আগ্রহ হয়। পরে আমিও কাজ শিখি। শুধু আমি নই আমার এলাকার আরও অনেক নারী এখানে ফ্রিতেই কাজ শিখেছেন। এখন পড়ালেখার পাশাপাশি আমি এই কাজ করে নিজের হাত খরচ চালাতে পারছি।

অপর এক গৃহিনী মনিরা খাতুন জানান, আমরা আগে কুরুশ-কাঁটার কাজ জানতাম না পরে নুরজাহান আপার থেকে কাজ শিখে এখন সংসারের আয় করতে পারছি। সাংসারিক ভাবেও এখন স্বচ্ছতা এসেছে। নারী উদ্যোক্তা নুরজাহান বেগম জানান, কুরুশকাটার কাজ সুতা দিয়ে করতে হয়। আমার এখানে ডাইনিং টেবিলের সেট, কুসুন কভার, মশারির কভার, বাচ্চাদের টুপি, জুতা, জামার গলা, ব্যাগ, গায়ের শাল সহ ১৫/২০ টি প্রোডাক্ট রয়েছে। এছাড়াও ক্রেতারা যেভাবে চান আমরা সেই ভাবেই কাজ করে দেই। এখন এলাকার বাইরেও অনলাইনে মাধ্যমে বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি করছি মোটামুটি ভাবে।

তিনি জানান, আমার তিন বছরের প্রায় লাখ টাকা আয় হয়েছে। এখন যদি বেশি বিক্রি করতে পারি তাহলে প্রতি মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হবে। যেটা দিয়ে আমি আমার সংসারে স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছি। আমি নিজে থেকে এই এলাকার ১০/১২ জন নারীকে এই কাজ শিখিয়েছি। এখন তারাও অনেকটাই স্বাবলম্বী।

রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা জানান, নুরজাহান বেগম দীর্ঘদিন থেকে কুরুশ-কাঁটার কাজ করে আসছেন। ওনি একজন নারী উদ্যোক্তা। ওনার এই হস্তশিল্প বাজারজাত করণে সঠিক প্রক্রিয়া না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করছি। এর আগে ওনাকে সহ জেলা প্রশাসক স্যারের কাজেও গিয়েছিলাম। সেসময় তিনি সরকারি ভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমি আশা করি উপজেলা প্রশাসন থেকে এই সকল নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগীতা করবেন।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও সবুজ কুমার বসাক জানান, উদ্যোক্তা যারা আছেন, যারা ভাল কাজ করেন তাদের পাশে সব সময় আছি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন