চট্টগ্রাম ওয়াসার মেগাপ্রকল্পে এ কে এম ফজলুল্লাহর আমলে কমিশন বাণিজ্যসহ অনিয়ম
এম আর আমিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়েরেজ প্রকল্পের কাজে কমিশন বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এ কে এম ফজলুল্লাহ। তার আমলে চট্টগ্রাম নগরীতে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নেওয়া হয় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প। এর মধ্যে আটটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও নগরীতে ৪০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার পানির জন্য হাহাকার।
তার মেয়াদে গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসা যেসব বড় প্রকল্প নিয়েছে সেগুলো হলো— কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়), চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প (সিডব্লিউএসআইএসপি) ও ভান্ডালজুরি পানি সরবরাহ প্রকল্প এবং পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত আরও ছয়টি প্রকল্প। প্রথম চারটি প্রকল্পে ব্যয় ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাকি প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।
ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকল্প নিয়ে কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত তদন্তে নেমেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফজলুল্লাহকে অপসারণের আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান তদন্তের দায়িত্ব পান। গত ৭ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রামে এসে বিস্তারিত তদন্ত করে ওই মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেন।
গত (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি পদ থেকে এ কে এম ফজলুল্লাহকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। একই পদে সাময়িকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ চট্টগ্রামের পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীতে ৪০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার পানির জন্য হাহাকার চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিন গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। কিন্তু এরপরও গ্রাহকের চাহিদার বিপরীতে ১২ থেকে ১৫ কোটি লিটার পানির ঘাটতি থেকে যায়। ৩০ শতাংশ পানি কারিগরি অপচয়ের নামে নষ্ট হয়।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সিস্টেস লস দেখানো কোটি কোটি লিটার পানি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি তার তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে রয়েছে অন্তত ৩০০টি চোরাই পাম্প হাউজ। যেগুলো বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ নেই। আবার ফুটো সারাতে বছরে পর বছর খরচ দেখানো হয়েছে কোটি টাকারও বেশি। যা এমডি- কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম বলেন, নগরীর চান্দগাঁও ও আগ্রাবাদ এলাকায় ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ চলছে। নগরীতে এখনো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পুরোনো পাইপলাইন রয়েছে। নতুন পাইপলাইন বসানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকার এক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নতুন পাইপলাইন এবং স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শেষ হলে সিস্টেম লস একেবারেই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
চট্টগ্রাম ক্যাবের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন,পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে বড় কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের মেয়ের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে তিনি প্রকল্পের কাজ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সবকিছু বের হয়ে আসবে।ফজলুল্লাহর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর প্রায় এক হাজার কোটি লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে। এতে গ্রাহক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ পরিমাণ পানি বাঁচানো গেলে পানির দাম বাড়াতে হয় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর নেই। উল্টো সিস্টেম লসের নামে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরোনো। ফলে সার্বিকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা না গেলে অপচয় কমবে না।