ডার্ক মোড
Sunday, 13 July 2025
ePaper   
Logo
গলাচিপায় টানা বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা ডুবে বিপাকে কৃষকরা

গলাচিপায় টানা বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা ডুবে বিপাকে কৃষকরা

গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
 
পটুয়াখালীর গলাচিপায় টানা ভারী বর্ষণে আমন ধানের বীজতলা, আউশ ধানের ক্ষেত, সবজির খেত এবং মাছের ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এতে চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
 
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলমান অতিবৃষ্টিতে গলাচিপা উপজেলায় প্রায় ১৮৫০ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষেত, ৭২০ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৩৫০ হেক্টর সবজির জমি এবং ৩৫০ হেক্টর পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক এলাকায় বীজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক এলাকায় এখনও পানির নিচে রয়েছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, বৃষ্টির পানিতে ৫০০-র বেশি পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে উপজেলার রাস্তাঘাট, দোকানপাট, হাটবাজার, বসতবাড়ি এবং কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে— বোয়ালিয়া, মুরাদনগর, পানপট্টি, ডাকুয়া, গোলখালী, চিকনিকান্দি, কলাগাছিয়া, চরকাজল ও চরবিশ্বাস।
 
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নজরুল মিয়া বলেন, এ বছর আগেভাগেই বীজতলা বানাইছিলাম। জমি ভালো ছিল, বীজও চড়া দামে কিনছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে সব শেষ। এখন আবার নতুন করে করলে সময় চলে যাবে, আর লাগানোর সময় পাব না।
 
একইভাবে কৃষক রহিম মাতব্বর জানান, আমি তো ঋণ কইরা বীজ কিনছি। এই বৃষ্টিতে সব খতম হইয়া গেল। সরকার যদি নতুন করে বীজ না দেয়, তাইলে তো আমি দেউলিয়া।
 
 
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, অনেক খাল-নালা ও প্রাকৃতিক জলাধারে অবৈধভাবে মাছ চাষের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে, ফলে পানি স্বাভাবিকভাবে নামতে পারছে না। স্লুইস গেটগুলো সময়মতো না খোলায় মাঠে পানি জমে রয়েছে।
 
সদর ইউনিয়নের কৃষক জাফর মিয়া বলেন,
“আমার জমির পাশের খালে প্রভাবশালীরা বাঁধ দিছে মাছ চাষের জন্য। পানি নামতে পারতেছে না, তাই বীজতলা পঁচে গেল।”
 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরজু আক্তার বলেন, আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছি। তারা মাঠে ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করছেন। স্লুইস গেট ও কালভার্ট সচল রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
তিনি আরও জানান, বর্তমানে কৃষকদের নতুন করে বীজতলা তৈরিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বীজ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
 
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
 
স্থানীয় কৃষকদের দাবি— দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং সরকারি জরুরি সহায়তা ছাড়া চলতি মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই সময়টায় তারা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
 
 
 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন