কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতালের সম্মুখে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাসমান সেতু
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে হাকালুকি হাওরের জলাবদ্ধ বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে কুলাউড়ার নিম্নাঞ্চলসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বর্ষার শুরুতে ১০ দিন থেকে প্লাবিত কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালের যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত হাসপাতাল প্রাঙ্গন ও প্রধান সড়কে রোগীদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে একটি অস্থায়ী ভাসমান সেতু।
আগত রোগীরা যেনো স্বাচ্ছন্দ্যে হাসপাতালে আসতে পারেন তার জন্য এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন কুলাউড়ার তিনজন ব্যবসায়ী। তারা হাসপাতালের সম্মুখে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ভাসমান সেতু। বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের খাঁচার ওপর বাঁশকাঠ লোহা ও রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে করে অনায়াসে লোকজন তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন।
এরআগে ২০২২ সালের বন্যার সময় হাসপাতাল সড়কে ভাসমান সেতু তৈরি করে প্রশংসিত হয়েছিলেন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই, ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন সুমন ও আব্দুল কাইয়ুম। এবারও তারা এগিয়ে এলেন। ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে তারা সেতু তৈরির কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সদস্যরাও এগিয়ে আসে। তাদের ঐকান্তিক সহায়তায় নির্মিত হয় সেতুটি।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়ক থেকে হাসপাতালের ভেতর পর্যন্ত প্রায় ২৫০-৩০০ ফুট লম্বা ভাসমান সেতুর কাজ চলছে। আর সেতুর ওপর দিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা যাতায়াত করছেন।
কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব করেরগ্রাম এলাকার বাসিন্দা কইতরী বেগব বলেন, গত তিনদিন ধরে আমার নাতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করাই। তখন হাসপাতালের সামনে প্রচুর পানি থাকায় অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে যাই নাতিকে দেখতে। কিন্ত এখন সেতুটি তৈরি করার কারণে দূর্ভোগ ছাড়াই চলাচল করতে পারবো। যারা সেতুটি তৈরি করেছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানাই তাদের উদ্যোগের জন্য।
মরিয়ম বেগম নামে আরেকজন মহিলা জানান, ৪দিন ধরে আমার বড়মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতিদিন দিনে দুই-তিনবার প্রয়োজনে হাসপাতালের বাইরে যাতায়াতে রিকশা-ভ্যান ভাড়া দিতে হয় ২০-৩০ টাকা লাগছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে প্লাবিত পানিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই বলেন, বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে হাসপাতালটি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল সড়কটি তলিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কেউই এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেননি। এছাড়া ড্রেনের ময়লা-আবর্জনায় পানি দূষিত হওয়ার কারণে এই পানি মাড়িয়ে যারা চলাচল করছেন তারা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের এই কষ্ট লাগবে ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বানে এই ভাসমান সেতু স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে কিছুটা হলেও সহজ হবে যাতায়াত ব্যবস্থা। আমরা আশা রাখছি, অচিরেই স্থায়ীভাবে এই দুর্ভোগ লাগবে সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন রাস্তাটি উঁচুকরণের উদ্যোগ নেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফেরদৌস আক্তার বলেন, গত অর্থবছর হাসপাতালের সামনে ড্রেন ও সড়ক উঁচুকরণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও সেটির কোন সুরাহা হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করেছি। হাসপাতাল আঙ্গিনা প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দেড় ফুট নিঁচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেন ও রাস্তা উঁচু করলে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবেনা। এই সেতুটি খুবই ভালো এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রচুর রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য যথেষ্ট সুবিধা হয়।