ডার্ক মোড
Sunday, 20 July 2025
ePaper   
Logo
কাপাসিয়ায় বিসিআইসির বিরুদ্ধে সার ডিলার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

কাপাসিয়ায় বিসিআইসির বিরুদ্ধে সার ডিলার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

 


কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি


গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে বিসিআইসির সার ডিলার নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি খোরশেদ আলম বেপারী নামে এক সার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের কামরুল ইসলাম সহ কতিপয় কৃষক গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও সার-বীজ মনিটরিং সভাপতি বরাবর লিখিত এ অভিযোগ দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নানাবিধ অভিযোগ এবং বিসিআইসির ডিলারদের সাথে প্রতারণা সহ ক্ষমতার অপব্যবহার করায় বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন, গাজীপুর জেলা ইউনিট তাকে কাপাসিয়া ইউনিটের সভাপতির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা যায়, অভিযুক্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাবুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ খোরশেদ আলম বেপারী। সে বিগত আওয়ামীলীগের সময় 'মেসার্স খোরশেদ এন্টারপ্রাইজ' নামে বিসিআইসির সার ডিলার হিসাবে নিয়োগ পান। অভিযোগ রয়েছে সে কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চারজন এমপি-মন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে ওই সার ডিলার নিয়োগ পান।
একজন বিসিআইসির সার ডিলার নিয়োগের জন্য সরকারি গেজেট ও সার ডিলার নিয়োগের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সেমতে যে ইউনিয়নের জন্য ডিলার হিসাবে নিয়োগ পেতে চান, তাকে ওই ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অথচ খোরশেদ আলম কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েও ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঘাগটিয়া ইউনিয়নের 'চালার বাজারে' বৈধ ও নির্ধারিত ডিলার থাকা সত্ত্বেও সেখানে নিয়োগ পেয়েছেন। গেজেটের নিয়ম অনুযায়ী ওই ইউনিয়নের জনগণ বা কৃষক তাদের চাহিদা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তা জানাবেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান উপজেলা কৃষি অফিসারকে জানালে বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানাবেন। পরে তা জেলা প্রশাসকের অনুমোদন পেলে পত্রিকায় সার ডিলার নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ খোরশেদ আলম তৎকালীন আওয়ামীলীগের ক্ষমতার দাপটে অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েও অন্যায়ভাবে ঘাগটিয়া ইউনিয়নে নিয়োগ পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে  তিনি সময় মতো দোকানে আসেন না এবং কৃষকরা তাদের চাহিদা মতো সার তার নিকট থেকে পায় না। এলাকার কৃষকের চাহিদা মিটাতে না পারলেও সে বিএডিসির সার ও বীজের ডিলারসিপ নেয়। এছাড়া খোরশেদ আলম তার স্ত্রীর নামেও গাজীপুর সদরের বাড়িয়া ইউনিয়নে বিএডিসির আরেকটি সার ও বীজের ডিলারসিপ নেয়।
অভিযোগ রয়েছে খোরশেদ আলম প্রথমত কাপাসিয়া সদর বাজারে কার্ডধারী খুচরা সার বিক্রেতা এবং বিএডিসির বীজ ও সার ডিলার হিসাবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে একই সাথে অন্য ইউনিয়নে বিসিআইসির সার ডিলার হিসাবে নিয়োগ পান। নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে সে একই সাথে খুচরা সার বিক্রেতা এবং বিসিআইসির ডিলারসিপ হিসাবে দীর্ঘদিন যাবত সার উত্তোলন করেন। সে কৃষকদের কল্যাণে কাজ না করে ক্ষমতার দাপটে অন্যদের ডিলারসিপ বানিয়ে দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।  ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নানাবিধ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এলাকাবাসী সাধারণ কৃষকদের স্বার্থে অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা খোরশেদ আলমের ডিলারসিপ বাতিল করে তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আউলিয়া খাতুন বিসিআইসির সার ডিলার খোরশেদ আলম বেপারীর নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক ও জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি বরাবর অভিযোগটি নির্দেশনা ও নীতিমালা মোতাবেক যথাযথভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডাঃ তামান্না তাসনীম সার ডিলার নিয়োগ সংক্রান্ত বিশেষটি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা মনিটরিং কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
গাজীপুর জেলা বিসিআইসি সার ডিলার এসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মোঃ আঃ কাদির মিয়া জানান, 'মেসার্স খোরশেদ এন্টারপ্রাইজ' এর মালিক খোরশেদ আলম বেপারীর বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন কাপাসিয়া উপজেলা ইউনিটের সভাপতি। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ এবং বিসিআইসির সার ডিলারদের সাথে প্রতারণা সহ ক্ষমতার অপব্যবহার করায় তাকে সাময়িক ভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু আগেও খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাই যথাযথ ভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

অভিযুক্ত খোরশেদ আলম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিগত সময় আওয়ামীলীগের সমর্থক হিসাবে থাকলেও কখনো কোন পদ-পজিশন ছিল না। যথাযথ নিয়ম মেনেই বিসিআইসির ডিলারসিপ নেয়া হয়েছে। কোন ধরনের অনিয়ম বা নীতিমালা বহির্ভূত কোন কাজ করা হয়নি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন