ডার্ক মোড
Tuesday, 17 September 2024
ePaper   
Logo
এবার ৮ দফা দাবি বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের

এবার ৮ দফা দাবি বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই নানা রকম দাবিতে জড়ো হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। এবার চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে নবগঠিত ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদ’ নামের এক সংগঠন।

এ বিষয়ে আজ বিকাল ৪ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সংগঠনটি। যা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনটি বিবৃতিতে বলছে, ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন এদেশের গণমানুষের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আশার সঞ্চার করেছে। জনগণ অন্যান্য অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সর্বজনীন চিকিৎসাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন।

এই প্রেক্ষাপটে গণমুখী স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে, চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মীদের ‘পেশাগত সুরক্ষা ও অধিকার’ নিশ্চিত করতে গত ১২ই আগস্ট ২০২৪, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী দেশের সচেতন ও গণতন্ত্রকামী চিকিৎসক সমাজের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদ' গঠিত হয়েছে।

একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরেও এদেশে জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। সংবিধানে আইন দ্বারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাকে অধিকার হিসাবে সংরক্ষিত করা হয়নি। সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে স্বাস্থ্যখাতকে ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সরকারি চাকুরিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নেই। বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোন নিয়ম-নীতি নেই, তদারকি নেই। রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত থেকে হাজার কোটি টাকার লুটপাট হয় অথচ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ে না, যে বরাদ্দ আসে তাও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না।

হাসপাতাল পরিচালনা, একাডেমিক ব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্য-প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রভাব-প্রতিপত্তি, ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, তদবির, দলীয়করণ, অব্যবস্থাপনা ও ঢালাও বেসরকারিকরণ- স্বাস্থ্যব্যবস্থার গোটা কাঠামোটাকেই ভেঙে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না, তাদের মনে ক্ষোভ জমেছে, আর অন্যদিকে বিগত সময়ে সরকার নিজ দায়িত্ব আড়াল করে চিকিৎসক ও জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে। ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’– এর নেতৃবৃন্দ সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে আপামর সাধারণ চিকিৎসকদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে পারেনি। তাই আমরা একটি গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আশু দাবী সমূহ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পেশ করছি। এছাড়াও আমরা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে একটা সমন্বিত ও সার্বজনীন চিকিৎসা কাঠামো গড়ে তোলার জন্য ‘জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি’ পেশ করবো।

স্বাস্থসেবার উন্নয়নে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। যেই দাবিগুলো হলো:

১. ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, স্বাস্থ্যখাতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী ও শান্তি সমাবেশের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা।

২. জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সকল ছাত্র-জনতার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

৩. স্বাস্থ্যসেবাকে সুযোগ নয়, অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।

৪. দালাল মুক্ত হাসপাতাল, টেস্ট ও কমিশন বাণিজ্য বন্ধ এবং ওষুধের দাম কমানো।

৫. বিএমএ, ডেন্টাল সোসাইটিসহ সকল মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক পেশীশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

৬. বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, ট্রেইনী ও রেসিডেন্সি কোর্সে অধ্যয়নরত বেসরকারি ডাক্তারদের যৌক্তিক বেতন কাঠামো প্রণয়ন (নূন্যতম ৫০ হাজার)।

৭. ডিজি হেলথ সহ স্বাস্থ্য প্রশাসনে নিযুক্ত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সকল দোসরদের অপসারণ এবং শূন্য হওয়া পদসমূহে গণতন্ত্রমনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে ‘বিশেষ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনপূর্বক সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন নিশ্চিত করা।

৮. জুডিশিয়ারির ন্যায় স্বতন্ত্র ‘হেলথ সার্ভিস কমিশন’ গঠন ও তার অধীনে সমন্বিত, সুস্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য, সার্বজনীন চাকুরীবিধি প্রণয়ন, যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-পোস্টিং, জনবান্ধব চিকিৎসা সেবা, নিয়মতান্ত্রিক রোগী রেফারাল এবং চিকিৎসক সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীর নিয়মতান্ত্রিক পদোন্নতি সুনিশ্চিত করা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন