
একান্ত সাক্ষাৎকারে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়ের : সরকারি কলেজ, এমপিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বদলিতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
আলীমুজ্জামান হারুন
সরকারি কলেজ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রিতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বদলিতে আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদবির করতে হবে না। পড়তে হবে না টাউট- বাটপারদের পাল্লায় । ‘ডিও লেটার’ ও ‘তদবির’ বাণিজ্যে আর থাকছে না। পুরো ব্যবস্থাকে ডিজিটাল ও নিয়মতান্ত্রিক করতে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে তা কার্যকর করেছে সরকার। বদলী-পদায়নকে স্বচ্ছ করার জন্য নতুন ওয়েব সাইট করা হয়েছে । তদবির বাণিজ্যে বন্ধে এই প্রক্রিয়া চালুর যাবতীয় কাজ এখন চূড়ান্ত । এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
সম্প্রতি অনলাইন পোর্টাল লাস্টনিউজবিডিকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি এ সব কথা জানান।
সদালাপী,মিস্টভাষী,নিরবে কাজ করে যাওয়া এই চৌকশ সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানান , শুধু সরকারি শিক্ষক না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের একই প্রক্রিয়ায় বদলীর জন্য সফটওয়ার তৈরী করা হয়েছে ।
তিনি জানান, শিক্ষকদের বদলিতে দীর্ঘদিনের চর্চিত ‘ডিও লেটার’ ও ‘তদবির’ বাণিজ্যের যুগ শেষ হচ্ছে। কেউ পারবে না টু পাইস কামাতে । বদলি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে ।
‘সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/পদায়ন নীতিমালা ২০২৫’ শিরোনামের এই নীতিমালা অনুযায়ী এখন থেকে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করে প্রভাষক থেকে অধ্যক্ষ সবার বদলি হবে। প্রতি তিন মাসে একবার আবেদনের সুযোগ থাকবে। সর্বোচ্চ পাঁচটি পছন্দ দেওয়া যাবে। দ্বৈত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষা সচিব জানান, শিক্ষক বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বদলির আবেদন করতে হলে নিজ নিজ পার্সোনাল ডেটা শিট (পিডিএস) হালনাগাদ করে নির্ধারিত অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এ আবেদন করা যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (www.shed.gov.bd), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (www.dshe.gov.bd) কিংবা www.emis.gov.bd ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট লিংকের মাধ্যমে।
অনলাইন ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে পাঠানো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। তা কাগজে লেখা হোক, ই-মেইলে পাঠানো হোক কিংবা ডিও লেটার বা রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে হোক। সব ধরনের বিকল্প আবেদন ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমন আচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সতর্ক করেন সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ।
তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষকরা প্রতি তিন মাসে একবার বদলির আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করা যাবে। সেই পছন্দের বাস্তবতা, পদসংখ্যা ও প্রশাসনিক প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে বদলির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ। বদলি সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের । নতুন নীতিমালায় বদলি ও পদায়নের দায়িত্ব নির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির মধ্যে। ফলে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আর থাকছে না। এখন থেকে পদের গুরুত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বদলির আবেদন মূল্যায়ন ও অনুমোদন করবে। এই অনলাইনভিত্তিক বদলি প্রক্রিয়া একদিকে যেমন পেশাগত ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে তদবির-নির্ভরতা ও অনিয়মের পথ রুদ্ধ করবে।
এই যুগান্তকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা।