
ইউক্রেইনের লুহানস্ক অঞ্চলের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া’
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন বছরেরও বেশি সময় পর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া; রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এমনটি জানিয়েছেন অঞ্চলটির রাশিয়া-সমর্থিত প্রধান।
রয়টার্স লিখেছে, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়াকে তার সীমান্তভুক্ত করে নেওয়ার পর থেকে লুহানস্ক ইউক্রেইনের প্রথম অঞ্চল যা পুরোপুরি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেল।
রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এই অঞ্চলটির আয়তন ২৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লুহানস্কসহ প্রতিবেশী দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিজিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা দেন।
রাশিয়া বলেছে, এই অঞ্চলটি এখন রাশিয়ার অংশ, এটি তাদের পারমাণবিক ছাতার মধ্যে ঢুকে গেছে এবং এটি কখনোই ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
পশ্চিমা দেশগুলো পুতিনের এ পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করেছে আর বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র এর স্বীকৃতি দেয়নি।
‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ এর রাশিয়ার তৈরি করা প্রশাসনের কর্মকর্তা লিওনিদ পাসেচনিক, যাকে অঞ্চলটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছে মস্কো, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে বলেছেন, “লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক অঞ্চলটি পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে- শতভাগ।”
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছি আর এ নিয়ে ইউক্রেইনও কোনো মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেইন আগে বলেছে, লুহানস্কসহ অন্য যে অঞ্চলগুলো রাশিয়া দাবি করেছে সেগুলি ইউক্রেইনের ভূখণ্ড বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, তাই মস্কোর দাবি ভিত্তিহীন ও অবৈধ। এসব অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি কখনোই না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে কিইভ।
লুহানস্ক একসময় রুশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। কিন্তু রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর এটির মালিকানা হাতবদল হয়। ১৯২০ সালে লাল ফৌজ এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ১৯২২ সালে অঞ্চলটি ইউক্রেইনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রিপাবলিকের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত হয়।
ইউক্রেইনের পশ্চিমাপন্থি ময়দান বিপ্লবে ২০১৪ সালে দেশটির রাশিয়াপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সরকারের পতন ঘটলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়া ক্রাইমিয়া উপদ্বীপকে নিজেদের সীমান্তভু্ক্ত করে নেয়। ওই বছরই রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রাশিয়ারপন্থি বাসিন্দারা বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই শুরু করে আর তাতে ইউক্রেইনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
রাশিয়া ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত লুহানস্ক ও দোনেৎস্কর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিতে শুরু করে। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতের রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু করে।
তারপর থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেইনের ১৯ শতাংশ ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে লুহানস্কের পাশাপাশি দোনেৎস্ক, জাপোরিজিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এর পাশাপাশি রাশিয়ার সামরিক বাহিনী খারকিভ, সুমি ও দনিপ্রোপেত্রোভস্কের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে।