অভিশংসিত হলেন দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আকস্মিক সামরিক আইন জারি ঘিরে সৃষ্ট অচলাবস্থার মাঝে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংসদে দ্বিতীয় দফার ভোটে অভিশংসিত হয়েছেন। শনিবার দেশটির সংসদের বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়া প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
যদিও বিরোধীদের তীব্র আপত্তি ও সংসদে ভোটাভুটির পর মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইউনের নিযুক্ত করা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সু এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদে অভিশংসিত হলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন ইউন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না তার।
প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সু বলেছেন, ইউনের অভিশংসনের পর দেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন তিনি। বলেন, ‘‘আমি সরকারকে স্থিতিশীল করার জন্য আমার সমস্ত শক্তি এবং প্রচেষ্টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো।’’
দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংসদে অভিশংসিত হয়েছেন ইউন। এর আগে, ২০১৭ সালে দেশটির রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হেকে অভিশংসিত করেন সংসদ সদস্যরা।
সামরিক আইন জারি ঘিরে গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে প্রথম অভিশংসনের প্রচেষ্টা চালান বিরোধীরা। তবে সামান্য ভোটের ব্যবধানে সেই দফায় বেঁচে যান তিনি। ওই সময় তার রাজনৈতিক দল ভোট বয়কট করায় অভিশংসনের পক্ষে সংসদে বিরোধীদের কোরাম করা সম্ভব হয়নি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টির অন্তত ১২ জন আইনপ্রণেতা বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ার পর শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে অভিশংসন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ৩০০ আসনের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের ১৯২ আসনে নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়। যা অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের পথ পরিষ্কার করে।
শনিবার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট ২০৪ জন আইনপ্রণেতা। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৮৫ জন। এছাড়া তিনজন আইনপ্রণেতা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন এবং আটটি ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সংসদে অভিশংসনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতা সমর্থন জানানোয় এখন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের ভাগ্য নির্ধারণ হবে দক্ষিণের সাংবিধানিক আদালতে। দেশটির এই আদালত আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইউনকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ইউনকে সরানোর জন্য সাংবিধানিক আদালতের ৯ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিলের অন্তত ছয়জনকে অভিসংশন প্রস্তাবের পক্ষে মত দিতে হবে। আদালতের এই কাউন্সিল যদি অভিশংসনের পক্ষে মত দেন, তখনই কেবল প্রেসিডেন্টকে স্থায়ীভাবে পদ ছাড়তে হবে। যদি ইউনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত করা হয়, তাহলে দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য দুই মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
সূত্র: রয়টার্স।