
অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা করছেন ঢাবির ডেপুটি রেজিস্টার মঞ্জুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মঞ্জুর হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার আড়ালে তিনি একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। তবে মঞ্জুর হোসেনের সেই অনুমতি নেই বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঞ্জুর হোসেন এমআই করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। কিন্তু সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। তার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। গত ১৩ জুলাই মঞ্জুর হোসেন ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেন, যার নম্বর টিআরএডি/ডিএসসিসি/২১৬৭৭৮/২০১৯। এতে দেখা গেছে, আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমএসআর কেমিক্যাল রি-এজেন্ট সামগ্রী সরবরাহের কাজ পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান এম আই করপোরেশন। এই কাজের মূল্য ৩২ লাখ টাকা। এর আগে চলতি বছর একই ধরনের একাধিক ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। যেমন, এপ্রিলে ৪৪ লাখ ও ৮ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ২৩ লাখ এবং জানুয়ারিতে ৭৭ হাজার টাকার কাজ পেয়েছেন তিনি। এর আগে ২০২২ সালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের কাজ পেয়েছেন।
ঠিকাদারি ব্যবসা করে তার ব্যাংকে জমা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তার প্রতিষ্ঠান এম আই করপোরেশনের নামে করা অ্যাকাউন্টের (নম্বর ১১৪২১১১২০২৭৮৯৮৪) গত সেপ্টেম্বর মাসের এক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, মঞ্জুর হোসেনের অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৬৮ লাখ ৫ হাজার ৮৪ টাকা।
চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল তার অ্যাকাউন্টে লেনদেনের তালিকা বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, ২ মার্চ তার অ্যাকাউন্টে টাকা ছিল ৭২ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৫ টাকা। ২৯ মার্চ তা কমে হয় ৩৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। এরপর ২ এপ্রিল ২০ লাখ টাকা যোগ হয়। একদিনের মাথায় আবার ৫৩ লাখ থেকে কমে হয় ৩৩ লাখ টাকা। আবার সেদিনই ২০ লাখ টাকা যোগ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে কেউ ব্যবসা করতে পারেন না। কেউ ব্যবসা করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু মঞ্জুর হোসেন অনুমতি নেননি।
এদিকে, করোনার সময়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী রেজিস্ট্রারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ঢাবির জনসংযোগ দফতর থেকে বলা হয়, শিক্ষা ছুটিতে থাকা অবস্থায় শারমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছিলেন। এটা চাকরি শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসা করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেখানে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে না জানিয়ে চুপিসারে ঠিকাদারি করে যাচ্ছেন। এগুলো চাকরি শৃঙ্খলার পরিপন্থি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুর হোসেন বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন করছি। সে কারণে বিষয়গুলো সামনে আনা হচ্ছে। আমাকে নির্বাচনটা করতে দেন, এরপর আমি আপনাদের (সাংবাদিক) সাথে বসে সব কিছু খুলে বলবো। সবসময় নির্বাচন এলে এরা ঢাবি আর অ-ঢাবি নিয়ে ঝামেলা করে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নয় তারা এসব সামনে নিয়ে এসেছে।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছাত্ররাজনীতি করার সময় ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিলাম। এরপর সেগুলো ছোট ভাইয়েরা চালাচ্ছে। আমি সম্পৃক্ত নই। অনেক দিন আগের লাইসেন্সের মূল্য আছে। তাই আমি এটি নবায়ন করে রাখি। বিভিন্ন সময়ে বড় ভাই, ছোট ভাইরা ব্যবহার করেন।
ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঋণ নিয়েছিলাম, সেখানকার পঞ্চাশ লাখ টাকা আছে। আমি সম্প্রতি পলাশী বাজারের দোকান বিক্রি করেছি। সেখান থেকে ২০ লাখ টাকা পেয়েছি। সাথে আছে ব্যাংক লোন। যে কারণে অনেক টাকা দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলেন, অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কর্মকর্তা ব্যবসা করতে পারেন না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মঞ্জুর হোসেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে কী বলা আছে সেটিও আমার জানা নেই।