
লালমনিরহাটে মহানবী সাঃ কে কটূক্তির অভিযোগে সেলুনের কর্মী বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ, ওসির বক্তব্য টক অবদা কান্ট্রি, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত ডিআইজি
মোঃ লাভলু শেখ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
মহানবী সাঃ কে ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাবা ও ছেলের বিচারের দাবিতে। ফুসে উঠেছে লালমনিরহাটের ধর্মপ্রান মানুষ।লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নরসুন্দর বাবা ও ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনায় গত ৩দিন যাবৎ লালমনিরহাটে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে ঘটনার পর জনতার সামনে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরনবীর দেওয়া একটি বক্তব্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবত্র শুরু হয়েছে তোলপাড় । যদিও ওসি বলেছেন, পরিস্থিস্তি নিয়ন্ত্রনে রাখতে আমি এ বক্তব্য দিযেছি। এদিকে বুধবার ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সমাবেশ করেছেন রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন।
এর আগে গত রোববার লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোশালা বাজার এলাকায় স্বনাতন ধর্মালম্বী পিতা পুত্র ২ নরসুন্দরকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে উত্তেজিত জনতা। অভিযুক্তরা হলেন, পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল। তারা লালমনিরহাট সদর উপজেলার নবীনটারী এলাকার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে গোশালা বাজারের হানিফ পাগলার মোড় এলাকায় নরসুন্দরের দোকান চালিয়ে আসছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,গত শুক্রবার মহানবী (সা.)-কে নিয়ে সেলুন কর্মীর ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য শোনার দাবি করেন সেখানে চুল কাটতে যাওয়া এক কিশোর। এ ঘটনার ২দিন পর রোববার কয়েকজন জোহরের নামাজের পর স্থানীয়রা সেলুনটিতে গিয়ে সেলুন কর্মী ও তার ছেলেকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে লালমনিরহাট সদর থানার সামনে বিক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ মুসলমান জড়ো হয়ে বাবা-ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে থানা ঘেরাও করে। খরব পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ওইদিন রোববার সন্ধ্যায় শহরের নামাটারী আল-হেরা জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানার একটি মামলা দিলে ওই মামলায় পিতা পুত্রের নামে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাতেই জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির জানানো তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত শুক্রবার (২০জুন) দুপুরে পৌরসভার নামাটারী এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র নাজমুল ইসলাম (১৯) ওই সেলুনের দোকানে চুল কাটতে যান। চুল কাটা অবস্থায় একটি সম্পর্কের সুত্র ধরে নরসুন্দর পরেশ চন্দ্র শীল নাজমুল ইসলামকে কথা বার্তার একপর্যায়ে বিশ্বনবী (সাঃ) সম্পকে কটুক্তি করেন। এদিকে ওই ঘটনার পর রোববার (২২জন) দুপুরে নাজমুল ইসলাম অন্যান্য মুসলমান ব্যক্তিদের নিয়ে আবারও ওই সেলুনের দোকানে গিয়ে বয়োবৃদ্ধ পরেশ চন্দ্র শীলকে দোকান থেকে বের করে মারধর করেন। এসময় বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যায় ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল। উপস্থিত সকলের কাছে হাতজোড় করে ছেলে পরেশ বাবার জন্য ক্ষমা চায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা তার কোন কথা না শোনে বয়োবৃদ্ধ পরেশ চন্দ্রকে মারধর করতেই থাকে। খবর পেয়ে সদর থানার ওসি মোহাম্মদ নুুরনবীর নেতৃত্বে থানা পুলিশ এগিয়ে এসে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাবা ছেলেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। এদিকে বিচারের দাবীতে ‘সম্মিলিত মুসল্লিবৃন্দ, গোশালা বাজার জামে মসজিদ’ ব্যানারে মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়।
এদিকে অভিযুক্ত পরেশ চন্দ্র শীলের পুত্র বধু ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীলের স্ত্রী দীপ্তী রানী রায় এক ভিডিও বক্তব্যে বলেন, "তিনি কারাগারে শশুর ও স্বামীকে দেখতে গিয়ে কি কারনে এ রকম হলো ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। শশুর পরেশ চন্দ্র পূত্রবধূকে জানায়, শুধু ১০টাকার জন্য ওই ঘটনা ঘটেছে। অন্য কিছুই ঘটেনি। সেলুনের দোকানে ওই ছেলে নাজমুল ইসলাম চুল দাড়ী কাটিয়ে নিয়ে ১০টা কম দেয়। তখন সে টাকা কম না নেওয়ায় তাকে দেখে নেবে - এমন কথা বলে। একপর্যায়ে নাজমুল চিৎকার করে কথা বললে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে এ ঘটনা ঘটে"।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদর থানার ওসির একটি বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে তোলপাড়।ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, আপনাদের মতো চোখে পানি আমারও এসেছে। কীভাবে এত বড় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এ দেশে করে। আমি আপনাদের কথা দিলাম। আমি তাদের যখন অ্যারেস্ট করেছি। বাংলাদেশে এমন মামলা তাদের দেব। নিশ্চিত তাদের যেন যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হয়...।’
জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, ভাইরাল হওয়া বক্তব্যটি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও উপস্থিত লোকজনকে শান্ত করার জন্য বলেছি। এর পিছনে আমার অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।
লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সদর থানার ওসির বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা আমি জেনেছি,তিনি হয়তো বা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত রাখার জন্য এভাবে বলতে পারে। তবে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার বিকেলে ঘটনাটি সরেজমিনে তদন্তে এসে রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন। বুধবার বিকেলে লালমনিরহাট শহরের গোশালা সোসাইটির প্রাঙ্গনে অবস্হিত লালমনিরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন।।
উল্লেখ যে, একাধিক ব্যাক্তি জানান, ওসি এরকম বক্তব্য না দিলে উত্তেজিত জনতা থানা ভাংচুর করতো। তবে ওসির ওই দিনের সাহসী ভূমিকায় জনগনের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন যেমন তেমনি থানা রক্ষা পেয়েছে।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?