
নওগাঁয় কোরবানির চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য; নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা
এম রেজাউল ইসলাম নওগাঁ
কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য থেকে এ বছরও বঞ্চিত নওগাঁর ১১ টি উপজেলার প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটের কারণে প্রতি বছর গরিব মিসকিনরা যেমন তাদের হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি নওগাঁর তৃণমূল পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীরা একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন।
প্রতি বছর কোরবানির ঈদের পর মৌসুমী ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এবার অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চামড়ার দাম ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করছে, ফলে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের এগিয়ে আসার প্রয়োজন বলে মনে করেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
শরিফুল ইসলাম মাসুম নামে এক মৌসুমী ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা গ্রাম থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে একটু কম রেখে চামড়া ক্রয় করে তা বাজারে নিয়ে এসেছি, কিন্তু সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কারণে আমরা এখন বিপাকে পড়েছি।
যে চামড়া ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় ক্রয় করেছি এখানে তা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চামড়া পচনশীল হওয়ায় লোকশান হলেও বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে মনিটরিং বা ভালো কোন চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে নওগাঁয় ভালো উদ্যেগ গ্রহণ করলে এই সিন্ডিকেট থেকে আমরা রক্ষা পাবো এবং নায্য মূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারবো।
আরেক মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, নওগাঁয় চামড়া ব্যবসার সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে আমাদের ব্যবসায়ীক সমিতির কমিটির নির্বাচন দিতে হবে। ২০ বছর থেকে একজন ব্যক্তিই সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কোন নির্বাচন দিচ্ছেন না। তিনি চামড়া গুদাম অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন।
আমিনুল ইসলাম নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, আমার মাদ্রাসার ১৬ টি চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর কাছে আসলে, প্রায় দুই ঘন্টা তালবাহানা করার পর তিনি ৮৫০টাকা দরে এবং ১৬ টি গাই গরুর চামড়া ৩৫০ টাকা দরে নিয়েছেন আরো কিছু চামড়া ছিল সেগুলো ১৫০টাকা করে দাম দিতে চান এবং ভেড়া ও ছাগলের চামড়া ১০-২০ টাকা করে হলে নিবে বলেন। চামড়ার তৈরি জিনিসের অনেক মূল্য কিন্তু চামড়ার মূল্য নেই কেন? সরকার একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন কিন্তু তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন ।
নওগাঁর চামড়া বাজারে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী দাবি করেছেন, "আমরা কোনো সিন্ডিকেট করছি না, বরং চামড়ার গুণগত মান অনুযায়ী বিভিন্ন দামে ক্রয় করছি।
তবে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বাজারে একধরনের একচেটিয়া মূল্য নির্ধারণ এবং ব্যবসায়ীদের চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা গুণগত মান অনুযায়ী নয়, বরং সিন্ডিকেট নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন।
এ অবস্থায় বাজারে প্রকৃত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ না হলে এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইবনুল আবেদীন বলেন, ইতোমধ্য দুই একটি অভিযোগ পেয়েছি তা আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?
হ্যাঁ
না
মন্তব্য নেই
0%
0%
0%
Popular Posts
Archive
Please select a date!
Submit