৫০ বছর বহু শিল্প কর অব্যাহতি পেয়েছে, আর কতকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ৫০ বছর বহু শিশুকে (শিল্প) লালন করে কর অব্যাহতিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর কতকাল শিশুদের লালন করব। সুরক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, তা না হলে প্রতিযোগিতামূলক হতে পারব না।
ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষ্যে আজ (মঙ্গলবার) সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টি পারপাস হলে আয়োজিত সেমিনারে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুল হক প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ব্যবসা করার পর বলেন আমাদের কর অব্যাহতি দিন। আমি উদাহরণ দিলাম না। আপনারা বুঝতে পারেন, ওইসব শিশু এখনও শিশুই রয়ে গেছে। শারীরিকভাবে বড় হয়ে গেছে তারপরও এখনও সুরক্ষা চাচ্ছে। এই সুরক্ষার দিন কিন্তু চলে গেছে।
কর, মূসক ফাঁকি দিলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দাতা সংস্থাগুলো ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও, কর অব্যাহতি এসব নিয়ে প্রশ্ন করছে। বিদেশের বহু জায়গায় বাংলাদেশে ট্যাক্স রেভিনিউ, সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
কর্মকর্তাদের আরও বেশি বন্ধুসুলভ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, একেবারে জোর করে আদায় করবেন। যদি অসুবিধা হয় শুনবেন। কমপ্লায়েন্স করতে একটু সহযোগিতা করবেন। বিশেষভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। এনবিআরের বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ নিয়ে আসে। যদিও এনবিআরের অনেক সীমাবদ্ধতা ও ম্যান্ডেট আছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা আমার কাছে গেলেই এনবিআর নিয়ে অভিযোগ করে। আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, তখনও তারা অভিযোগ করতো। আমাদের এটা করতে হবে, ওটা করছে না। এনবিআরের সীমাবদ্ধতা আছে। তাদের কতগুলো ম্যান্ডেট আছে। চাইলেই সব তো দিয়ে দেওয়া যাবে না। নাথিং ইজ ফ্রি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। পশ্চিমা দেশে সন্তান একটু বড় হলে বাবা-মাও টাকা পয়সা দেয় না। বিনা পয়সায় কিছুই দেয় না।
ট্যাক্স রেভিনিউ বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, নানা কারণে শুল্ক বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। কারণ এর প্রভাব সরাসরি জনগণের ওপর পড়ে। ডব্লিউটিও’র যে পরামর্শগুলো আছে সেগুলো মেনে শুল্ক বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। আমাদের মূল উৎস হচ্ছে মূসক ও আয়কর।
ব্যবসায়ীরা সরকারের পক্ষে মূসক সংগ্রহ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পালনে ব্যাপক ঘাটতি আমরা দেখতে পাই। অনেক সময় গ্রাহক ভ্যাট দিতে চান, তারা রসিদ চান কিন্তু ব্যবসায়ীরা গড়িমসি করেন। এমন অভিযোগ আছে, গ্রাহক ভ্যাট দিয়েছেন কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেননি। এই জায়গায় আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে।
মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর আমূল বদলে গেছে রাজস্ব প্রশাসনের চিত্র। রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে বড় সংস্কারের পথে হাঁটছে এনবিআর।
৫ আগস্টের পর মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৯৪টি নিরীক্ষা শেষ করে ১৫৯.৬৬ কোটি টাকার মূসক ফাঁকি উদঘাটন করেছে। আদায় করেছে ৬১.১৬ কোটি টাকা। ভ্যাট অনুবিভাগ গত ৩ মাসে ৯ হাজার ৮২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান, ভ্যাট আইন ও বিধি সংস্কারে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আদায়ে সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব, করদাতার সন্তুষ্টি, কর সংস্কৃতির অভাব, নিম্ন দেশজ উৎপাদনশীলতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অটোমেশনের পথে হাঁটছে ভ্যাট বিভাগ।
ভ্যাট প্রদানের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা কমাতে প্রয়োজন সচেতনতা। ভ্যাটের হার কমিয়ে আওতা বাড়ানো যায় কি না সেটা দেখা যেতে পারে। যদি ভ্যাটের হার কমে তাহলে এর আওতা বাড়বে।