ডার্ক মোড
Monday, 28 April 2025
ePaper   
Logo
সুফল প্রকল্প : জঙ্গলবিহীন পাহাড়  আবার গাছগাছালিতে ভরে  উঠেছে

সুফল প্রকল্প : জঙ্গলবিহীন পাহাড় আবার গাছগাছালিতে ভরে উঠেছে

ফটিকছড়ি ও হাটহাজারি ফিরে জাহানঙ্গীর খান

বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্য পট। গাছ গাছালি বন জঙ্গল বিহীন পাহাড় আবার গাছগাছালিতে ভরে উঠেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর চোখ জুড়ানো সবুজে পাহাড়ে ফিরে এসেছে প্রাণ। অথচ কয়েক বছর আগেও যেসব পাহাড় ছিল গাছগাছালি বিহীন। বন্যপ্রাণী বিহীন এসব পাহাড়ে গাছ গাছালির অভাবে নানা প্রজাতির পাখির বিচরণ চোখে পড়েনি বছরের পর বছর। হারিয়ে যেতে বসেছিল বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী সহ বুনো পাখি। অথচ মাত্র কয়েক বছরে এ চিত্র পাল্টে দিয়েছে বন বিভাগের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প ।সরেজমিন চট্টগ্রাম জেলার পাহাডী এলাকা ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বনাঞ্চল ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। গত শনিবার দিনব্যাপী ফটিকছড়ির হাজারিখীল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও হাটহাজারীর শোভনছড়ি  ঘুরে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় সুফল প্রকল্পের বাস্তবায়িত নানামুখী কর্মকান্ড লক্ষ্য করা গেছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে রামগড়-সীতাকুণ্ড বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলের মধ্যেই রয়েছে বিচিত্র সব বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হাজারীখিল, যেখানে দেখা মিলেছে ১২৩ প্রজাতির পাখি। রঙ-বেরঙের এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রায় কাঠময়ূর ও মথুরা। আছে কাউ ধনেশ ও হুতুম পেঁচাও।অপরদিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় কথা হয় স্থানীয় হাজারিখিল দাড়িটা মহাজন পাড়ার বাসিন্দা আশীষ কুমার নাথ (৪২) এর সাথে। পেশায় মোদী এবং খাবারের ব্যবসা করেন। আশীষ কুমার নাথ জানিয়েছেন, তিনি সুফল প্রজেক্টের বেলতলী বিসিএস সমিতির মাধ্যমে ৭৫ হাজার টাকা বিনা সুদে ঋণ নিয়ে এখন স্বাবলম্বী।  আগে বন নির্ভর জীবন ছিল। বনের কাঠ সংগ্রহ বন্যপ্রাণী স্বীকার এসব ছিল স্বাভাবিক। সুফল প্রজেক্ট এর মাধ্যমে এনজিওর একটি সেমিনার থেকে তিনি জানতে পারেন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বন রক্ষার জন্য গাছ কেটে নেয়া একটি বড় ধরনের অপরাধ। এরপর থেকে তিনি ব্যবসায় নেমে পড়েন। এবং এলাকার মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ বন রক্ষায় তিনি এখন নিজেই অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে। স্থানীয় আরো অনেকের সাথে কথা হয়, তারা জানিয়েছেন নতুনভাবে বন্যপ্রাণী ও বনাঞ্চল রক্ষায় বন বিভাগের লোকজনের সাথে তারাও এখন কাঠ পাচারকারীদের হাত থেকে বন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। কথা হয় হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ অফিসার সিকদার আতিকুর রহমানের সাথে। আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য দেশের বন্যজীব বৈচিত্র সংরক্ষণের এক বিরল পাহাড়ি অঞ্চল। এখানেই মায়া হরিন, হাতি, মেছো বাঘ, হনুমান, বানর,লজ্জাবতী বানর,বনরুই কিং কোবরা, অজগর সহ অসংখ্য  ভয়ঙ্কর বন্যপ্রাণীর বসবাস। বাংলাদেশের একমাত্র এই বনেই ‘বন রুই‘দেখা মেলে। এছাড়া মাছরাঙ্গা, সারস, পাখি নানা প্রজাতির বক বালি হাঁস সহ বিরল প্রজাতির পাখির বিচরণ ক্ষেত্র এই বন। তিনি বলেন ২০১৯-২০ সালে সুফল প্রকল্পের আওতায় বনের বিভিন্ন অংশ অনেক খালি জায়গায় নতুন করে গাছ রোপন করা হয়। সেসব গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে গাছগাছালিতে বন আরো সমৃদ্ধ হয়ে গেছে। তবে তিনি আরেকটা খুব প্রকাশ করে বলেন এত বড় বন রক্ষায় লোকবল মাত্র পাঁচ জন। লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময় কাঠ পাচারকারী বন  দস্যদের প্রতিহত করা যায় না। এ কারণে বোন রক্ষা করতে হলে আরো লোকবল নিয়োগ করতে হবে। তা না হলে বন রক্ষায় সংকটেই পরতে হবে। তবে তিনি অনেকটা আসাম্নিত হয়ে বলেন সুফল প্রকল্পের আওতায় ৪৬০ জন স্থানীয় বন নির্ভর মানুষকে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। বনাঞ্চল এলাকার বাসিন্দা এসব মানুষ এখন বন রক্ষার জন্য আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কিছুটা হলেও স্থানীয় মানুষের মাঝে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ফলে বনদস্যুরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে।এখানে কথা হয় সুজানগর চা বাগানের শ্রমিক রুপম কুমার ক্রমি (৪৩) এর সাথে। তিনি বলেন সামাজিক বনায়নে ন্যাড়া পাহাড় গুলো গাছগাছালিতে ভরে উঠেছে। তবে তিনি বলেন এই এলাকা আধুনিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ কারণে যানবাহনের সংকট থাকায় বন্যপ্রাণী অভয়শ্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন আসতে পারে না। এ কারণে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে ফলে বন বিভাগ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিতে পারছে না। তিনি বলেন, বন বিভাগের সুফল প্রকল্প না এলে বনের অনেক জমি বেহাত হয়ে যেত, গাছ গাছালি বিহীন পাহাড় গুলো এখন গাছে ভরে গেছে। পাহাড়ে গাছ রোপন করা না থাকলে সেসব পাহাড় দখল করে মানুষ ঘরবাড়ি বসাতো এতে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেত। সরজমিন চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগের হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম  জানান, সুফল প্রকল্পের  আওতায় প্রথম ব্যাচে নার্সারি করে গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল। এসব কাজ বন বিভাগে মনিটরিংয়ে রোপন করা হয়েছে। পরিচর্যা করা হয়েছে। এ কারণে গাছগুলো দ্রুত বড় হয়ে গেছে। সুফল প্রকল্পের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের অধীনে ইফতারের স্কুল মসজিদে গভীর নলকূপ বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বনাঞ্চল এলাকা স্কুলে সহযোগিতা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জীবন বাজি রেখে বনাঞ্চলে কর্মরত বিট অফিসের স্টাফরা কাঠ পাচারকারী দস্যদের আটক করে। অথচ বন স্টাফদের ঝুঁকি ভাতা নেই।এবিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে  আশেপাশের ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। বনের কাঠ পাচার হয়ে চলে যায় ইটভাটায়। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারলে বনাঞ্চল উজাড় জার হয়ে যাবে। পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। বন বিভাগের কর্মকর্তা ও  স্টাফরা এবিষয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরো বলেন, সুফল প্রকল্প পাহাড়ের বনাঞ্চল সমৃদ্ধ করেছে। এই বনাঞ্চল রক্ষা করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন