সিরিয়ায় এক গণকবরেই লাখো মরদেহের সন্ধান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি গণকবরেই অন্তত এক লাখ মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সিরিয়ার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান এমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্স এই তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার দামেস্ক থেকে টেলিফোনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির প্রধান মোয়াজ মোস্তফা বলেছেন, দামেস্কের বাইরের ওই গণকবরে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকারের হাতে নিহত কমপক্ষে এক লাখ মানুষের মৃতদেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, রাজধানী থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরের আল কুতায়ফাহ এলাকায় গণকবরটি অবস্থিত। ওই এলাকায় গত কয়েক বছরে তিনি আরও একই ধরনের অন্তত পাঁচটি গণকবর শনাক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। এরপর প্রায় তিন দশক ধরে শক্ত হাতে শাসন করেন সিরিয়া। দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর দুই সপ্তাহের কম সময়ের সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত ৮ ডিসেম্বের বাশারের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে।
এরপরই সিরিয়ায় গিয়ে সিরিয়ান এমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্সের প্রধান মোয়াজ মোস্তফা সাংবাদিকদেরকে গণকবরের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আল কুতায়ফাহ এলাকার গণকবরে কমপক্ষে এক লাখ মানুষকে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
মোস্তফা বলেন, এই পাঁচটির বাইরেও সিরিয়ার অন্যান্য এলাকাতেও আরও অনেক গণকবর রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত। আসাদের বাহিনীর হাতে নিহতদের মাঝে মার্কিন, ব্রিটিশ ও অন্যান্য দেশের নাগরিকও রয়েছেন।
তবে মোস্তফার এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ওই সময় দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করেন আসাদ। পরে এই বিক্ষোভ দেশটিতে পুরোমাত্রার গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।
সিরিয়ান বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের কুখ্যাত কারাগারে আটকে রেখে বন্দীদের গণহত্যাসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেছেন।
যদিও বাশার আল-আসাদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছেন। গণকবরের সন্ধানের বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত কৌসে আলদাহক তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন গত জানুয়ারিতে জাতিসংঘে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
তবে গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত কৌসে আলদাহক বলেছিলেন, তিনি সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষা করছেন। সিরিয়ার জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ায় গেছেন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সিরিয়ার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান এমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্সের প্রধান মোস্তফা। তিনি বলেন, সামরিক হাসপাতাল থেকে আল কুতায়ফাহর গণকবরে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল সিরিয়ার বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার। গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন শাখায় নির্যাতনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দেহ সংগ্রহ করে সেগুলোকে গণকবরে পাঠানো হতো।
মোস্তফা বলেন, এসব গণকবরে যারা কাজ করেছিলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব লোকজন সিরিয়া থেকে পালিয়ে এসেছেন অথবা আমরাই তাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছি।
তিনি বলেন, তার সংস্থার সদস্যরা বুলডোজার চালকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই বুলডোজার চালকদের কবর খনন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদেরকে মরদেহ গণকবরে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হতো। তারপরে ময়লা দিয়ে ঢেকে ফেলে হতো এসব কবর।
সূত্র : রয়টার্স।