ডার্ক মোড
Friday, 22 November 2024
ePaper   
Logo
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অনলাইন ডেস্ক

 

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। করোনার মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনটি পালনে জাপা নানা কর্মসূচি নিয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতারা আজ সকালে রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল থেকে কাকরাইল কার্যালয়ে এরশাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি হবে। দুপুরে সেখানে সংক্ষিপ্ত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখবেন জি এম কাদেরসহ দলের শীর্ষনেতারা। কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে দুপুরে সুবিধাবঞ্চিত ১০ হাজার মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন জাপা চেয়ারম্যান।

জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু জানান, রংপুরে এরশাদের কবর জিয়ারত ও সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন দলের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে স্থানীয়ভাবে কোরআনখানি, মিলাদ-মাহফিল ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে। সারা দেশে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মসজিদে দোয়া-মাহফিল আয়োজনেরও কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া জাপার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভার আয়োজন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পল্লীজীবনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন এরশাদ। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির কীর্তি অক্ষয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশে। দীর্ঘ নয় বছর রাষ্ট্রপ্রধান থাকায় বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলায় তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। তার পৈত্রিক নিবাস অবিভক্ত ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে। তার বাবার নাম মৌলভী মকবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। তার দাদা মৌলভী শাহাদৎ হোসেনও ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং তিনিই ছিলেন কুচবিহার অঞ্চলের প্রথম মুসলিম আইনজীবী। এরশাদের মায়ের নাম মজিদা খাতুন।

এরশাদ ছিলেন নয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান এবং চার ভাইয়ের মধ্যে প্রথম। তার ডাকনাম ছিল পেয়ারা। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনহাটায়। দিনহাটা হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে মেট্রিক পাস করেন। মেট্রিক পাসের পর দিনহাটা ছেড়ে এরশাদ ১৯৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ক্রীড়া ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে যুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাস করেন। পরে তার বাবার ইচ্ছায় তিনি এমএ পড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হন।

১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোহাট সেনানিবাসে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ময়মনসিংহের স্বনামধন্য খান সাহেব উমেদ আলি সাহেবের কন্যা রওশন আরা ডেইজিকে বিয়ে করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়েন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে তিনি আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৭৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদোন্নতি পান। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার তার মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদ ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন।

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং তিনি এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনীতি এবং সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পর তিনি দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।

১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এরশাদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর তিনি জাতীয় সংসদে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন তুলে দেন।

উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সংস্কার কর্মসূচিতে দেশ পরিচালনার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন এরশাদ। তার দু’টি কালজয়ী স্লোগান হচ্ছে ‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ এবং ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’। গ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য তিনি ১৯৮৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার শেরে বাংলা নগরে বিশাল কৃষক সমাবেশে ‘পল্লীবন্ধু’ উপাধি পান।

তার যুগান্তকারী কার্যক্রম হচ্ছে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের সব মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা, ভূমি সংস্কার, ওষুধ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পথকলি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাতা, গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ঘটানো, শান্তি মিশনে সেনা পাঠানো এবং সারাদেশে ৫০৮টি বড় ধরনের ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন পাকা রাস্তা নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন।

তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সংস্কারে তিনি এদেশের সব খাতেই অবদান রেখেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মনে যেভাবে জায়গা করে নিয়েছেন, তা অমলিন থাকবে চিরকাল।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন