
সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু, বাজার সংকটে চাষি
এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। সোমাবার (৫ মে) থেকে দেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে উঠেছে সাতক্ষীরার রসালো সুস্বাদু আম। প্রথম ধাপে বাজারে এসেছে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোলাপখাসসহ স্থানীয় জাতের আম।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা ফিংড়ী ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেনের আম বাগান থেকে আম আহরণের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় আম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। আমের গুনগত মান বজায় রেখে নিরাপদে আম বাজারজাত করতে গত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সকাল থেকেই পাইকাররা আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার আমই দেশের বাজারে সবচেয়ে আগে পাকে। এই কারণে এর চাহিদাও সবচেয়ে বেশি। এ জেলার আমের স্বাদ অতুলনীয়।’এ বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কোনোভাবেই যেন কেমিক্যাল বা ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করে আম পাকানো না হয়, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৬ সাল থেকে সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হিমসাগর ও আম্রপালি জাতের আমের চাহিদা রয়েছে।কৃষি বিভাগ আরও জানায়, বিষমুক্ত ও গুণগত মানের আম বাজারজাত করতে কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্তে আম সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করা হয়। কিছু জাতের আম আগেই পাকে। মৌসুম শুরুর আগে বাজারে আম ওঠায় সাতক্ষীরার আমের চাহিদা একটু বেশি। অন্য দিকে বৈরি আবহাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। সাতক্ষীরার আমের কদর আছে দেশ ও দেশের বাইরে। আমের জাত ভেদে আম গাছ থেকে সংগ্রহের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ ক্যালেন্ডার। তবে, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৫ মে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোপালখাস, বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটির বিশেষ গুণাগুণ ও ভৌগলিক কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আগেভাগেই পরিপক্ক হয় সাতক্ষীরার আম। এর মধ্যে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আম দেশ-বিদেশে বেশ কদর অর্জন করেছে। ফলে বাজারে আগে ওঠায় তুলনামূলক ভালো দাম পান এখানকার চাষিরা।সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫হাজার আমবাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২হাজার ৮০০মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টন আমের গুণগত মান রক্ষায় নির্ধারণ করা হয়েছে বাজারজাতের সময়সূচি। এ জেলার উৎপাদিত আম ৪০০ কোটি টাকায় বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আম চাষিরা। তাদের অভিযোগ, সাতক্ষীরায় একটি মাত্র বাজার ( সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজার) থাকায় সবাইকে সেখানেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার ও সংলগ্ন রাস্তায় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বিক্রির সময় চাষিদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। এতে করে ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।চাষিদের দাবি, জেলায় আরও কয়েকটি বাজার চালু করা এবং খোলা মাঠে ভ্রাম্যমাণ পাইকারি বাজার বসানোর ব্যবস্থা করা হলে তারা ভালো দাম পেতেন। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।সরকার উদ্যোগ নিলে সাতক্ষীরার আমচাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবে। এতে চাষি বাড়বে এবং বেকারদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।