লাকসামে মৎস্য চাষ গিলে খাচ্ছে কৃষি জমি ও কাঁচা-পাকা সড়ক
মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম (কুমিল্লা)
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের বৃহত্তর লাকসাম উপজেলার শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে জেলা-উপজেলা কৃষি ও মৎস্য বিভাগের দায়িত্বহীনতা ও নিরব দর্শকের ভূমিকার কারনে সহস্রাধিক মৎস্য বেড়ি গিলে খাচ্ছে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি কৃষি জমি এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার কাঁচা-পাকা সড়ক।
উপজেলাগুলোর গ্রামীণ সড়কগুলো মৎস্য প্রকল্প করার ক্ষেত্রে সড়কের পাশে আলাদা বেড়ি (প্রটেকশন বাঁধ) করার নিয়ম থাকলেও তা কেউ মানছে না। ওইসব মৎস্য প্রকল্পের মালিকরা সরকারি রাস্তা বেড়ি হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে সরকার ইতিমধ্যে মৎস্য চাষীদের স্থানীয় মৎস্যবিভাগ থেকে নিবন্ধন বিধিমালা জারি করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও আন্তরিকতার অভাবে সরকারী ওই আদেশটি লাল ফিতায় বন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের সরকারী ফিসারীর ব্যবস্থাপনা এবং সরকারী পুকুর-জলাশয় লীজ নিয়ে বির্তকের শেষ নেই। চলমান বছরে ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে মৎস্য বেড়ি ও কাঁচা-পাকা সড়কগুলোর অস্তিত্ব যেন হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা যায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের বৃহত্তর লাকসাম উপজেলার নিম্নাঞ্চল মৎস্য চাষের ফলে সার্বিক ক্ষেত্রে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি রাস্তা মৎস্য প্রকল্পের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পানিনিষ্কাশন পথে প্রতিবন্ধকতা করে গড়ে উঠেছে এখানকার মৎস্য প্রকল্পগুলো। বর্ষা মৌসুমের পানি চলে গেলেও কৃত্রিমভাবে প্রকল্পের ভেতরে পানি আটকে রাখা হয়।
ফলে সড়কের একপাশে পানি এবং অন্য পাশে না থাকায় একদিকের পানি চুইয়ে সড়কগুলো আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে প্রথমে ফাটলের সৃষ্টি হয়। ফাটলগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে ধসে পড়তে থাকে প্রকল্পের দিকে। উপজেলাগুলোর ইউনিয়নের বেশির ভাগ কাঁচা-পাকা ও ইটের গ্রামীণ সড়কগুলো হুমকির মুখে আছে এবং একাধিক সড়কসহ অন্তত শতাধিক কাঁচা-পাকা সড়ক এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সড়কে যান চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাবে গত কয়েক বছর যাবত এ অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকাতেই আবাদি কৃষি জমিতে মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত কৃষি জমি কমছে। এলাকার নিম্নাঞ্চল বর্ষাকালের শুরুতেই প্রায়ই সময় জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। এ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সংযোগ খাল জবর দখল এবং কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামার সকল পথেই বন্ধ হয়ে গেছে।
অপর দিকে লাকসাম পৌরএলাকাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৪’শ ৯৫ হেক্টর জমি নিয়ে প্রায় ৪ হাজার ৪’শ ৭০টি পুকুর, মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ৯টি, মৎস্য বহুমুখী সমবায় সমিতি ৯৩টি, মৎস্যজীবি সমিতি ৮টি, মৎস্যচাষী সমিতি ৮টিসহ ৩’শ১৭টি নামে-বেনামে সমিতি মৎস্য চাষের সাথে জড়িত। চলমান অর্থবছরের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা মৎস্য বিভাগ অনেকক্ষেত্রে বির্তকের উর্দ্ধে উঠতে পারেনি।
এছাড়া সরকারী পুকুর ৫৬টি, খাল ১৮টি, মৎস্য হ্যাচারী ১৬টি, মৎস্য নার্সারী পুকুরের সংখ্যা ৯৪টি, চিংড়ি চাষীর সংখ্যা ১০ জন, বানিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠা মৎস্য খামারের সংখ্যা ৩’শ ৮টি, জেলে সংখ্যা ৮’শ৬৭ জন ও মৎস্যচাষী ১ হাজার ৬’শ৫০ জন। অপরদিকে পৌরএলাকাসহ ৮টি ইউনিয়নের ১’শ ৬৮ গ্রামে রয়েছে ১৯টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল। আবাদি কৃষি জমির পরিমান ১০ হাজার ৩’শ ৩২ হেক্টর জমি, মোট ফসলি জমি রয়েছে ২২ হাজার ৬০ হেক্টর জমি। মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১’শ৬৭টি গ্রামে ফসলি জমি প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমি , মৎস্য চাষী ৮’শ ২২ জন, মৎস্যজীবি ১ হাজার ৭’শ ৫০ জন, পোনা ব্যবসায়ী ৫৫ জন, মৎস্য খামার ছোট-বড় ১’শ ১৩টি, পুকুর প্রায় ২ হাজার ৩’শটি, বেড়ি প্রায় দেড় শতাধিক, মৎস্য হ্যাচারী ২টি, মৎস্য নার্সারী ২৪টি। তবে বেসরকারী হিসাবে প্রায় এর দ্বিগুন বেশি।
উপজেলাগুলোর একাধিক পরিবেশবাদী নেতা মুঠো ফোনে বলেন, সরকারি কাঁচা-পাকা রাস্তা মৎস্য প্রকল্পের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে একসময় যোগাযোগ ব্যবস্থা মারত্মক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ্য হবে। তখন এলাকার সাধারণ মানুষকে আরও ভোগান্তির শিকার হতে হবে।
স্থানীয় সরকার দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মৎস্য প্রকল্প মালিকরা সড়ককে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষের ফলে সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। সড়ক থেকে ছয় ফুট দূরত্বে পৃথক বেড়ি নির্মাণ করে মাছ চাষের নিয়ম থাকলেও প্রকল্প মালিকরা তা মানছেন না। কয়েক দিন আগে মনেহরগঞ্জের শাহাপুর-খরখরিয়া সংযোগ সড়কটি নির্মানে ৫/৬মাসের মাথায় গাছ-পালা সহ ধসে পড়ে।
জেলা-উপজেলা মৎস্য দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, ‘মৎস্য প্রকল্পের চাষিরা তাদের ব্যক্তিগত জমিতে মাছ চাষ করেন তাই মৌখিক সর্তক ছাড়া অনেক সময় আমাদেরর কিছু করার থাকে না।