
যা ঋণ আসছে তা দেনা শোধেই চলে যাচ্ছে: শিক্ষা উপদেষ্টা
বিদেশ থেকে যে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, তার বড় অংশ আগের ঋণ শোধ করতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার।
এমন পরিস্থিতিতেও শিক্ষা খাতসহ অগ্রাধিকারের জায়গাগুলোতে উচ্চ প্রভাব ফেলতে পারে এমন উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রফিকুল আবরার বলেছেন বাংলাদেশ বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
“যেখানে ঋণ পাচ্ছি তার চেয়েও বেশি বা প্রায় সমপরিমাণ অর্থ আগের ঋণ শোধ করতেই খরচ হচ্ছে। তবুও আমরা উচ্চ প্রভাব ফেলতে পারে এমন উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি।“
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ' ২০২৪-২৫ বাজেটে: শিক্ষা ও কর্মসংস্থান' শীর্ষক সেমিনারে কথা বলছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
শিক্ষা খাতের সংস্কার নিয়ে রফিকুল আবরার বলেন, “সময় এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও দায়বদ্ধতার অভাব আর সঠিক পরিকল্পনার ঘাটতি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে যে কাজ করা যেত, তা করা যায়নি এবং তাতেই হতাশা তৈরি হয়েছে।”
শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ‘দেওয়া হয়নি’, যা অতি জরুরি ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
“নারীর কারিগরি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা সমাধান করা যায়নি। সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে এবং স্টিগমা কমানো গেলে এই খাত থেকেও ভালো অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব।“
শিক্ষা উপদেষ্টার কথায়, “শুধুমাত্র কমিশন গঠন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। গ্রাসরুট পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।“
শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাংলায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্বসেরা বইগুলোর অনুবাদ করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি
শিক্ষা খাতের সংস্কারে নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং সুনির্দিষ্ট কার্যপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “শুধুমাত্র আলোচনা নয়, সময়সীমা নির্দিষ্ট করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।“
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ রাজ্জাক বলেন, “এখন দেশে প্রতিবছর ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রয়োজন। সে মাত্রায় বাংলাদেশ ৮ থেকে ১০ লাখ করতে পারে। এভাবে চললে একসময় বাংলাদেশ বৈশিক মার্কেটে পিছিয়ে পড়বে।“
শিক্ষাখাতে 'সিস্টেম ব্যয়' দূর করার জন্য ' ইন্টার ইউনিভার্সিটি লোন ফ্যাসিলিটি' করার গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার ' সময় মত' হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিতুমীর বলেন, “পৃথিবীর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই মাসে ভর্তি করায় ও চার বছর পর জুনে শেষ করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা নিয়ে কনসার্ন নেই। আমরা যদি পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত করতে পারি তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।“
এছাড়া অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান খাতে বর্তমান বাজেটে আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু ইউসুফ।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, উপউপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন