ডার্ক মোড
Thursday, 09 January 2025
ePaper   
Logo
মৃত্যুপথযাত্রী নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদী

মৃত্যুপথযাত্রী নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

শীতলক্ষা নদীকে বাঁচাতে বিভিন্ন দূষণ প্রতিরোধে নতুন বছরে নবউদ্যমে মাঠে নামছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক এ,এইচ,এম রাসেদ বলেন, শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জে এমনিতেই দূষণের পরিমাণ বেশি। শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালায় পানির দূষণটা অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। তখনি সবার টনক নড়ে। অথচ আমরা সারাবছর দূষণ কমাতে কাজ করি।

তিনি বলেন, আমাদের কার্যালয়ে অনেক অভিযোগ আসে। আমরা সে সকল অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সাম্প্রতিক সময়ে প্লাস্টিক দূষণ এর বিষয়টি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সেই অক্টোবর থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পর মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছিল। এখন অভিযোগ পাচ্ছি প্লাস্টিকের ব্যাগ আবার সুপার সপগুলোতে ফিরে এসেছে। এ বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ চলবে।

পরিবেশ বিদদের মতে, নারায়ণগঞ্জে চার থেকে ৫০০ ডাইং ফ্যাক্টরি রয়েছে। তারা ইটিপি প্লান্ট করেছে। কারণ ইটিপি প্লান্ট না থাকলে ডাইং এর অনুমোদন পাওয়া যায় না কিন্তু তারা এই ইটিপি প্লান্ট চালু করে না রাতে অপরিশোধিত বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেয়। নারায়ণগঞ্জের একমাত্র স্রোতশি^নী নদী শীতলক্ষার অবস্থা খুব শোচনীয়। প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য শীতলক্ষা নদীতে ফেলা হয়। ডাইং বর্জ্যতো আছেই।

জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বালু নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নারায়ণগঞ্জে ডাইং কারখানাসহ তরল বর্জ্য নির্গমনকারী শিল্পকারখানাগুলো গড়ে ওঠেছে। ছোট-বড় সাড়ে চার শতাধিক ডাইং কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে দুই শতাধিক। নদীকেন্দ্রিক এসব কারখানার অধিকাংশই ব্যবহার করছে না তাদের নিজস্ব ইটিপি প্লান্ট। এসব কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালের বর্জ্য নদীতে মিশে ভয়াবহ দূষণের সৃষ্টি করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জের পরিবেশবাদীরা শীতলক্ষা নদীকে বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন । তারা বলেন, সারা পৃথিবীতে এক সময় বিশুদ্ধ পানির নদী হিসেবে শীতলক্ষ্যা বিখ্যাত ছিল। ঔষধ তৈরীর জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর পানি ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হতো। বোতলের গায়ে লেখা থাকতো 'পিওর শীতলক্ষা ওয়াটার'।

কিন্তু দখলে দূষণে আজকে শীতলক্ষ্যা নদী বিপন্ন। একদিকে শিল্প কারখানার বর্জ্য অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ শহর, ডিএনডি এলাকা সহ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের সকল গৃহস্থালী বর্জ্য অপরিশোধিত ভাবে শীতলক্ষা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান করা না গেলে শীতলক্ষার পানি অচিরেই শোধন করেও ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমানে বছরে সাত-আট মাস শীতলক্ষা নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযুক্ত থাকছে।

যাদের কোমরে জোর রয়েছে তারাই নদী দখল করে। শীতলক্ষ্যার তীরের ডাইং কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদী রক্ষায় সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের প্রাণ শীতলক্ষ্যাকে দখল দূষণ থেকে বাঁচাতে এক হাজার কোটি টাকার বাজেট দাবি করেন ।

জানাগেছে, , নদী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে মোট ১২৬টি নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। এরমধ্যে আন্তঃদেশীয় ৫৭টির মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ এসব নদীতে বাধ দিয়ে প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করেছে। দখল এবং দূষণের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নৌপথ ধংস হয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখাগেছে, শহরাঞ্চলে পরিবেশ অবক্ষয়ে বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৬৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। পরিবেশ দূষণে বড় অনুষঙ্গ এখন প্লাস্টিকের অতিমাত্রার ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনা। দেড় দশকের ব্যবধানে শহরাঞ্চলে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুণ। শুধু রাজধানীও পাশ্ববর্তী জেলা শহরে বছরে জনপ্রতি প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ২৫ কেজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে নগরীর অভিজাত এলাকাগুলোতে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন