ভোলায় জেলেদের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ক গণমাধ্যম কর্মীদের মতবিনিময় সভা
ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় জেলেদের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ক গণমাধ্যমে কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে কোস্ট ফাউন্ডেশনের ভোলা সদরের কার্যালয়ের মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং: ইকোসিস্টেম-ভিত্তিক উপকূলীয় এবং ঐতিহ্যবাহী জলজ চাষ মৎস্য ব্যবস্থাপনা জিসিএ প্রকল্পের মাধ্যমে ফলোআপ সভার অংশ হিসাবে এতে ভোলা জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকরা অংশ নেয়।
এসময় আলোচনায় অংশ নেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন এর ভোলা প্রতিনিধি এডভোকেট নজরুল হক অনু, অমৃতলোক পত্রিকার সম্পাদক আহাদ চৌধুরী তুহিন, ভোলা দর্পন এর সম্পাদক মোতাছিন বিল্লাহ, বাসস এর ভোলা জেলা প্রতিনিধি আল-আমিন শাহরিয়ার, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি নেয়ামত উল্ল্যাহ, রুপালী বাংলাদেশ এর জেলা প্রতিনিধি শিমুল চৌধুরী, দেশ টিভির ভোলা প্রতিনিধি ছোটন সাহা, চ্যানেল ২৪ এর ভোলা প্রতিনিধি আদিল হোসেন তপু, দৈনিক খবরপত্রের ভোলা প্রতিনিধি আশিকুর রহমান শান্ত প্রমুখ।
মতবিনিময় সভার সঞ্চালনা করেন, কোস্ট ফাউন্ডেশন ভোলা জেলার টিম লিডার রাশিদা বেগম।
সভায় সাংবাদিকরা বলেন, ভোলার জনসংখ্যার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জেলে পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু এই জেলার জেলেরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তেমন ভালো নেই। জেলে ও জেলে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন মহল কতৃর্ক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। তাই মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলে ও জেলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমাদের এই দ্বীপ জেলায় মৎস্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানান।
এসময় সাংবাদিকরা আরো বলেন, কোস্ট ফাউন্ডেশন উপকূলের জেলেদের জীবন-জীবিকা মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজ গুলোকে এখন টেকসই করতে হবে। যাতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেরা তাদের পরিবার নিয়ে ভালোভাবে থাকতে পারেন। বক্তারা আরো বলেন, জেলেদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিকরণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে বক্তরা মত প্রকাশ করেন।
এসময় গণমাধ্যম-কর্মীরা কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশ সমূহ হলো:
* কার্ডধারী জেলের অধিকাংশই পেশা পরির্বতন করেছে। এদের তালিকা হালনাগাদ করা।
* জেলেদের রেজিষ্ট্রেশন পক্রিয়া সহজ করা।
* সরকারি জমিতে জেলেদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
* প্রকৃত জেলেদের প্রনোদনার আওতায় আনা।
* জেলে পরিবারের নারীরা প্রত্যেক্ষ পরোক্ষভাবে জেলে পেশায় নিয়োজিত। তাই তাদের মজুরী ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও স্বীকৃতি দেয়া।
* জেলেদের অধিকার, সফলতা, জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা করা।
* লিঙ্গ বৈষ্যমে না করে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধিতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করা।
* নদী বা সাগরে মাছ উৎপাদন বাড়ে না এবং জেলেরা মাছ কম আহরণ করতে পারে। তাই গবেষণা দরকার।
* প্রভাবশালী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি বেসরকারী ভাবে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
* অসাধু ব্যবসায়ী ও বোট মালিকদের নিয়ে সভা করতে হবে।
* জেলেদের সমস্যা সমাধানে জরুরী হলো জেলে পুনবাসন করা।
* পরিবারের নারীরা কোস্টের মাধ্যমে অনেক আধুনিক হয়েছে। বিভিন্ন সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদের সাহস ওদক্ষতা বেড়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ।
* এনজিও এর চেয়ে সাংবাদিক পেশা অনেক গুরুত্বর্পূণ। তাই সাংবাদিকদের লেখনিতে সরকারি স্টেকহোল্ডার, পলিসি মেকারগণের দৃষ্টিগোচর করাতে হবে। সরকারি পলিসিমেকারগন সচেতন হয়ে জেলেদের উন্নয়নে কাজ করতে সক্ষম হবে।
জিসিএ প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার রাশিদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, জেলে ও জেলে পরিবারের অধিকার উন্নয়ন ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ প্রকল্পটি ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ও ধনিয়া ইউনিয়ন জেলে নিয়ে কাজ করেছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায়ের নিরাপদ জীবীকায়ণ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করার জন্য আমরা কাজ করছি বলে জানান।
তিনি এ প্রকল্পে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন। এসময় জেলার কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সাংবাদিকদের নিয়ে জেলে, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি পরিবারে জীবনমান উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপ, আইন-কানুন-বিধি, সুযোগ-সুবিধা, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে অরিন্টেশন করানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে ফলোআপ সভা অনুষ্ঠিত হয়।