ডার্ক মোড
Thursday, 21 November 2024
ePaper   
Logo
বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের বিচরন থামছেনা

বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের বিচরন থামছেনা

জসিম উদ্দিন, মোংলা প্রতিনিধি

অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকারের ঘটনা বেশ পুরোনো। এসব জেলেরা প্রতিবছরই বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশের জলসীমায় পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় গভীর সমুদ্রে এভাবেই ভারতীয় জেলেদের অবাধ বিচরন চলছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

চলতি ইলিশ মৌসুমে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের উৎপাত বেড়েছে। তাদের কারণে দেশী জেলেদের মাছ শিকার ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশীয় জেলেরা। সার্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে মোংলা উপজেলা মৎস্য সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, “ভারতীয় জেলেরা প্রতিনিয়ত আমাদের মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, প্রজনন মৌসুমে বাংলাদেশে যখন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়, ভারতে তখন এ নিষেধাজ্ঞা থাকেনা। ফলে সহজেই ওরা এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। একই সময় মাছ ধরতে না পেরে আমাদের জেলেরা অর্ধাহারে অনাহারে থাকে”।

বিদ্যুৎ মন্ডল আরো দাবি করেন, ইলিশের ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে আমাদের হাজার হাজার জেলে খালি হাতে ফিরছে। কারণ তার আগেই ভারতীয় জেলেরা ইলিশ ধরে নিয়ে গেছে।

এদিকে, সর্বশেষ গত শুক্রবার (৩ সেপ্টম্বর) অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় বিপুল পরিমান ইলিশ ও সামদ্রিক মাছসহ ১৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। এর আগে গত ৮ আগষ্ট একই অপরাধে আরও ১৩ জন, ২৯ জানুয়ারী ২৮ জন ও গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ১৬ জন এবং ২ ডিসেম্বর ১৭ জন জেলে নৌ বাহিনীর হাতে আটক হয়। প্রতিবছরই এই ঘটনা ঘটে। এদিকে আটক ভারতীয় জেলেদের সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের অপরাধে ১৯৮৩ সালের সমুদ্রসীমা আইনের ২২ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।

সমুদ্র সংলগ্ন উপকূলের জেলে মোঃ বেলায়েত বোরহান উদ্দিন( সুমন), ও আবদুল মজিদ বলেন, বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকা কাছে হওয়ায় সেখানকার বিপুলসংখ্যক জেলে এ দেশের জলসীমায় মাছ ধরতে আসে। মাছ ধরার অত্যাধুনিক বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকায় তারা অনেক বেশি মাছ আহরণ করতে পারে। এছাড়া ভারতীয় জেলেরা কারেন্ট জালসহ পাঁচ ধরনের অত্যাধুনিক জাল ব্যবহার করে। তাদের কাছে রয়েছে জিপিএস (বিশেষ সংকেত) নামক বিশেষ ধরনের যন্ত্র। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় জেলেরা যে পথ দিয়ে আসে, আবার সে পথ দিয়েই ফিরে যায়।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশ কর্মকর্তা (মোংলা সদর দপ্তর) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার শেখ মেজবাহ উদ্দিন ব বলেন, “দেশীয় জলসীমায় ভিনদেশী জেলেদের প্রতিহত করতে নৌ বাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ডও কাজ করছে। বিদেশি জেলেরা যাতে দেশীয় সীমানায় ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে তাদের গতিবিধি মনিটরিংয়ের আওতায় এনে আমরা আরও কঠোর হচ্ছি”।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, “আর্ন্তজাতিক সালিশি আদালতে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের পর বাংলাদেশের জলসীমা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। পূর্ণ অধিকারে থাকা বিশাল
বিস্তৃত এ জলসীমা বাংলাদেশের জন্য অরক্ষিত না হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ সুযোগে প্রতিবছর
ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে ঢুকে লাখ লাখ টন মাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে” ।

ফিশারিজ বিভাগের এই আধ্যাপক আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যারা আটক হচ্ছে, তাদের সর্বচ্চ শাস্তি হওয়া দরকার”।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন