
বর্ষায় পাহাড় ধ্বসের আশংকা বান্দরবানে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব, ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান
অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রশাসন অভিযান চালালেও বান্দরবানে যেন থামছেই না পাহাড় কাটার মহোৎসব। কারণে, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে নানা অজুহাতে পাহাড় খেকোরা কাটছে পাহাড়। এবার অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে নাজিম উদ্দিন নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনে রাতে সমানতালে কেটে যাচ্ছে পাহাড়, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার বাকীছড়া, বালাঘাটা চড়ুই পাড়া, লেমুঝিড়ি, থোয়াইংগ্য পাড়াসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্কেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কাটছেন জেলা যুবদলের নেতা নাজিম উদ্দিনসহ মনির, ফারুক ও জসিম সিন্ডিকেট। বেশ কিছুদিন ধরে এসব এলাকা থেকে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ১০—১৫টি ডাম্পার ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে বান্দরবান ১৩২/৩৩ কেভি
(জিআইএস) গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জায়গা ভরাট কাজে। এদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করার কারণে আশপাশের বেশ
কয়েকটি রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দারাসহ স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। থোয়াইংগ্য পাড়া এলাকার বাসিন্দা থুইক্য মার্মা বলেন, আমাদের থোয়াইংগ্য পাড়া স্কুলের পাশের একটি পাহাড় থেকে দিন দুপুরে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে এবং মাটি গুলো ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পুরো রাস্তা কাঁদায় ভরে গেছে, ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসা যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে। যেকোন সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই এলাকার নাম প্রকাশে আরেক বাসিন্দা বলেন, বিএনপির লোকেরা প্রকাশে
পাহাড় কাটতেছে, প্রশাসন তো কিছুই বলতেছে না, আমরা বাঁধা দিয়ে কি হবে, আমাদের বাঁধা তো তারা মানবে না। এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটতে
থাকলে আশপাশের বেশ কিছু এলাকা সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। আমরা চাই দ্রুত এই পাহাড় কাটা বন্ধ করা হোক।অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিষয়ে যুবদল নেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, যেসব স্থানে
পাহাড় কাটা হচ্ছে সবগুলো আমার সাইট। পাহাড়ের মাটি গুলো আমরা বান্দরবান ১৩২/৩৩ কেভি (জিআইএস) গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জায়গা ভরাট
কাজে ব্যবহার করতেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মারুফা সুলতানা খান হীরামনি। তিনি বলেন, শহরের বালাঘাটা এলাকায়
অবৈধভাবে পাহাড় কাটতেছে এমন খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে ঘটনাস্থলে পাহাড় কাটায় জড়িতে কাউকে পায়নি। তদন্ত
করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে প্রতিবছর বর্ষায় ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা,
হয় প্রাণহানীও। তারপরও থামছে না অবৈধভাবে পাহাড় কাটা। গেল একদশকে বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানী হয়েছে ১০৫ জনেরও অধিক মানুষের।