
প্রেমের অপরাধে কিশোরকে নির্যাতন, মামলা নেয়নি পুলিশ
চিলমারী(কুড়িগ্রাম)সংবাদদাতা
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রেমের অপরাধে কিশোরকে ঘরে আটকে রেখে বর্বরোচিত নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে কিশোরীর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। এনিয়ে কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পযন্ত মামলা নথিভুক্ত করেননি পুলিশ। এদিকে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওই কিশোর।
গত ১০ জুন উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের গয়নার পটল এলাকায় একটি ঘরের মধ্যে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়। এনিয়ে গত ১৫ জুন কিশোরের বাবা বাদি হয়ে চিলমারী মডেল থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কিশোরের নাম আশরাফুল ইসলাম সজিব (১৭)। সে চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি ঢুষমারা এলাকার মোঃ আলমগীর হোসেন (৪৬) এর ছেলে। ওই ইউনিয়নের কিশোরীর (১৪) সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই কিশোর। কিশোরীর পরিবারের পক্ষের ১২/১৩ জন কিশোরকে আটকে রেখে নির্যাতন করেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্র জানায়, আলমগীর হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সজিব (১৭) এবং ওই ইউনিয়নের এক কিশোরীর (১৪) প্রেম-ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে কিছুদিন হতে অভিযুক্তরা সজিবকে মারপিটসহ খুন-জখমের উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে-যোগ-ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছিলেন। এরমধ্যে গত ৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে প্রেমিকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমিক সজিবকে তার বাড়ীর সামনে ডেকে নেয় এবং সেখান থেকে বিয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যায়। এরপর মেয়ের পরিবারের লোকজন ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার পর একটি বাড়ির ঘরের মধ্যে আটককে রেখে অমানবিক নির্যাতন করেন।
অভিযোগে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ জুন সকাল ৮ টার দিকে অভিযুক্তরা সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন বিবাদী একই উদ্দেশ্য সাধনকল্পে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক বে-আইনি সমাবেশে মিলিত হয়ে হাতে লাঠি, ছোরা, দা-কুড়াল, বেকি, বল্লম, মাছ ধরা ধারালো হান করা কোড়াসহ প্রভৃতি মারাত্মক, দেশিয় ধারালো অস্ত্রে-সস্ত্রে সু-সজ্জিত হয়ে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে চিলমারী কড়াইবরিশাল চর গয়নার পটল নামক গ্রামের পশ্চিম-উত্তরের একটি ফাঁকা স্থান হতে সজিবের হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘরের ভিতর খুটির সাথে শক্ত করে বেঁধে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় গামছা প্যাচিয়ে টানা-হেঁচড়া করে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। এসময় দু’টি চেতনা নাশক ইনজেকশন সজিবের দুই দাফনায় পুশ করে দেয়। এরপর সে অজ্ঞান হয়ে পরলে সকলে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা-ফুলা ও কালো জখম করে। পরে মোটর সাইকেলের লোহার চেন দিয়ে সজিবের পিঠে, বুকে, হাতে ও পায়ে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করে। পরে তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় তার পুরুষ লিঙ্গে সুই ঢুকিয়ে দেয়, পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে তার দুই হাতের নখে ও দুই পায়ের নখে সুই ঢুকিয়ে দিয়ে মধ্য যুগিও নির্যাতন করে।
কিশোর আশরাফুল ইসলাম সজিবের বাবা আলমগীর হোসেন অভিযোগে উল্লেখ করা বর্বররচিত নির্যাতনের বর্ণনার ঘটনা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ নিয়ে গত ১৫ জুন থানায় লিখিত অভিযোগ দেই। গতকাল পুলিশ বলছে, রংপুর মেডিকেলে যে ভর্তি করছেন ভর্তি সার্টিফিকেট এবং ছেলের ভিডিও করা ছবি এভাবে অপারেশন করছে ওই ভিডিওগুলো তুলে প্রিন্ট করে জমা দিতে হবে এটা ওসি সাহেব বলছে। এভাবে কাগজ দেয়ার পর আমার সুই, স্বাক্ষর নিচে। তারা বলতেছে, থানার এ বিষয়টক কোর্টে দেন ভাল হবে। তাতে আপনার পক্ষে ভাল হবে এটা বলছে। আমি কোর্টে মামলা দেই না দেই সেটা পরের ব্যাপার এখন আপনাদের এখানে মামলার দিকে আসছি আপনারা মামলা নেন। মামলা এখনো রেকর্ড হয়নি বলে জানান তিনি। মামলা হবে কি হবে না এ বিষয়টি বলতে পারছেন না এই বাবা।
অভিযুক্তদের মধ্যে রফিকুল নামে এক লোকের সঙে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয়দের এটা যোগসূত্র, স্থানীয়রা যে নিয়ে গেছেন আমাদের। উনি যে একটা মেয়ে কে নিয়ে পালাই গেছে, ধরে নিয়ে আসা হয়, বা রাখা হয়। এটা স্থানীয়রা বৈঠক দিয়ে তাদের শাসন করে পাঠাই দেয়, তারা মারধর করে। কারা মারধর করছে এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ছেলের গার্জিয়ানরা মারধর করছে। মারধরের ঘটনায় যদি মেডিকেল টেষ্টে যদি প্রমাণিত হয়, আর এটার যদি সঠিক অভিযুক্ত আমি হই এজন্য আইননত যেটা হবে সেটা মানতে আমি রাজি।
চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রহিম বলেন, আসলে মামলা নথিভুক্ত করতে হলে এসপি মহোদ্বয়ের অনুমোদন লাগে। এসপি মহোদ্বয় এই মামলার বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি এজন্য মামলাটা নেয়া হয়নি।
মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন
আপনি ও পছন্দ করতে পারেন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
আর্কাইভ!
অনুগ্রহ করে একটি তারিখ নির্বাচন করুন!
দাখিল করুন