ডার্ক মোড
Monday, 28 April 2025
ePaper   
Logo
নারায়ণগঞ্জে নিম্নমুখী হচ্ছে ভূগর্ভের পানির স্তর

নারায়ণগঞ্জে নিম্নমুখী হচ্ছে ভূগর্ভের পানির স্তর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ 

ক্রমশই নিচে নেমে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ভূগর্ভের পানির স্তর। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, ভূগর্ভে পানির নাগাল না পাওয়ায় বিকল হচ্ছে পানির মটর। উপরি ভাগের পানি ব্যবহারে জোর দিতে হবে। সুপেয় পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নিচে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে। ২৩০ ফুট গভীরে গিয়ে ওই অঞ্চলে মিলছে সুপেয় পানির স্তর। বছর ঘুরলেই পানির স্তর নিচে নেমে ২৪০ ফুটে গিয়ে ঠেকবে। নিরবচ্ছিন্ন পানি দূষণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে আরও নিচের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সংলগ্ন নদ-নদীর পানি পরিশোধন করেও পানির চাহিদা মেটাতে সমস্যা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জের গোগঙ্গার, বক্তাবলি, কুতুবাইল ও শিবুমার্কেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে।

 বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আশঙ্কা জনক হারে ভূগর্ভের পানির স্তর নিম্নমুখি হচ্ছে। এতে ভূমিকম্পসহ পরিবেশে নানামুখি বিরুপ প্রভাব পড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবেশবাদিরা। ২০১০ সালে গোগনগর এলাকায় পানির স্তর ৫১ ফুটের মধ্যে পাওয়া গেছে, যা ১০ বছরে ১০০ ফুটেরও নিচে চলে গেছে।  ২০২৫ সালে তা ১৫১ ফুটেরও নিচে দাঁড়িয়েছে। ফতুল্লা, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকার চিত্র অনেকটা একই রকম।জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে প্রতিবছর ভূগর্ভের সূপেয় পানির স্তর পরিমাপ বা নির্নয় করে থাকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। দপ্তরটির সদর উপজেলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের ব্যবধানে চলতি বছর সদর উপজেলার ফতুল্লা, এনায়েতনগর ও কাশিপুর ইউনিয়নে গড়ে ১০ ফুট করে নেমেছে পানির স্তর। এছাড়া কুতুবপুর, গোগনগর, আলীরটেক ও বক্তাবলী ইউনিয়নে পানির স্তর নেমেছে ১ থেকে ২ ফুট নিচে।নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ‘সদর উপজেলার মধ্যে ফতুল্লা, এনায়েতনগর ও কাশিপুর ইউনিয়ন শিল্প কারখানা অধ্যুষিত এলাকা। এসব এলাকায় গড়ে উঠা ডাইং কারখানাগুলোর পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। এতে ভূগর্ভের পানির উপর চাপ বৃদ্ধিপাচ্ছে। তাই অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় এসব ইউনিয়নে আশঙ্কাজনক হারে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।’গত বছর এনায়েতনগর ইউনিয়নে সুপেয় পানি মিলতো ১৭৫ ফুট গভীরে। এই বছর আরো ১৩ ফুট গভীরে গিয়ে ১৮৮ ফুটে মিলছে এনায়েতনগরে ভূগর্ভের সুপেয় পানি। এদিকে, গত বছরের তুলনায় এবছর ফতুল্লা ইউনিয়নে ৮ ফুট গভীরে নেমছে ভূ-গর্ভের পানি। যেখানে ১৯০ ফুট গভীরে পাওয়া যেত সুপেয় পানি, সেখানে এখন পানির স্তর মিলছে ১৯৮ ফুট গভীরে। এক বছরের ব্যবধানে কাশিপুরে পানির স্তর নেমেছে ৬ ফুট গভীরে। বর্তমানে এই ইউনিয়নে পানির স্তর ১৭১ ফুট গভীরে রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২ ফুট নিচে নেমে ১৪২ ফুট গভীরে মিলছে গোগনগর ইউনিয়নের সুপেয় পানির স্তর। আর ১ ফুট করে নিচে নেমে ১০৬ ফুট গভীরে রয়েছে আলীরটেক ও বক্তাবলী ইউনিয়নের পানির স্তর।

 বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আন্দোলনের সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, ‘গত ৮-১০ বছর ধরে এই বিষয়ে কাজ করছি। কিন্তু উপরি ভাগের পানি দূষিত হওয়ায় মানুষ সুপেয় পানির জন্য উপায় না পেয়ে এ ৫০০ ফুট গভীরে মটর স্থাপন করছে। ভূগর্ভের পানি সবচেয়ে বেশি উত্তোলন করছে ডাইং কারখানাগুলো। একটি ডাইং কারখানা একদিনে যেই পরিমানে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে, তা দিয়ে শহরের অর্ধেক মানুষের প্রয়োজন মিটে যাবে। ৯৯ শতাংশ পানি উত্তলণ করছে ডাইং কারখানা গুলো। সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না।’ এদিকে, বছর বছর সুপেয় পানির স্তর নিচে নামায় নানা বিপত্তি দেখা দিচ্ছে এসব অঞ্চলে। ফতুল্লার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পাম্প টেকনিশিয়ান ইশতিয়াক জানান, গত কয়েক বছর ধরে ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নামতে শুরু করেছে। তাই ভূগর্ভে স্থাপনকৃত সাবমার্সিবল পাম্পগুলো পানির নাগাল না পাওয়ায় প্রায় সময়ই জ্বলে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মটর বিকল হয়ে গেছে। যা আমরা সংস্কার করেছি।” খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে শহরতলীতে সূপেয় পানির জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ ফুট গভীরে নলকুপ স্থাপন করা হয়। ৫০০ ফুট গভীর খননের পরও পানি মিলছে ২৫০ ফুট গভীরে। অর্থাৎ, ৫০০ ফুট গভীরে যারা নলকুপ খনন করেছেন, তাদের অবশিষ্ট পানির স্তর রয়েছে ২৫০ ফুট নিচে। সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ‘ভূগর্ভের পানি বাঁচাতে হলে উপরি ভাগের পানি ব্যবহারে জোর দিতে হবে। যেমন, পুকুর, খাল বিল ও নদীর পানি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এসব পানিও ব্যবহার যোগ্য নয়, দূষিত হয়ে পড়েছে। তাই ভূগর্ভের পানি ব্যবহারে ঝুঁকেছে মানুষ। এদিকে, শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ বিষয়ক এক সেমিনারে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড: মুহম্মদ সোহরাব আলী   বলেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসির জন্য  পানি দিন দিন দুর্লভ হয়ে উঠছে। নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানার মালিকরা এখনই যদি পানি শোধন করে পুন: ব্যবহারের ব্যবস্থা না করেন তাহলে অদূর  ভবিষ্যতে তারা ভূগর্ভের পানিও পাবেন না।

 কারণ নারায়ণগঞ্জে শিল্প কারখানার মাটির গভীরের পানি তোলার কারণে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের মাটির নিচ পানি শূন্য হয়ে যাবে। শীতলক্ষ্যা নদী দূষণে মৃতপ্রায়। মেঘনা নদীরও নারায়ণগঞ্জ সংলগ্ন অংশের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে যেটি কমপক্ষে ৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন। 

ড: মুহম্মদ সোহরাব আলী  আগামী ২ বছরের মধ্যে কারখানাগুলিক পরিবেশে  তরল বর্জ্য ফেলার পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে বলেন,  নইলে প্রয়োজনে সরকার কারখানা বন্ধ করে দেবে। 

অনুষ্ঠানে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নারায়ণগঞ্জে সেন্ট্রাল এটিপি স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, এটিপির এত  ব্যায় এটি ছোট বা মাঝারি কারখানার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। পিপিপি' র মাধ্যমে সরকার সেন্ট্রাল ইটিপি স্থাপন করলে সব পক্ষের জন্য ভালো হয়।

 শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় নগরীর আলী আহমদ চুনকা মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা আঞ্চলিক অফিস।

 

পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক এইচ এম রাশেদ এর সভাপতি তে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন  পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি আশফাকুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু, পরিবেশ কর্মী কবি আরিফ বুলবুল, পারভেজ নীট গার্মেন্টসের কর্ণধার কোভিদ হোসেন পারভেজ, নীট কনসার্ণ গার্মেন্টস এর জিএম ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম, মাদার কালারের এজিএম মোহাম্মদ আলী, ইসলামী ফ্যাশন এর ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন