ডার্ক মোড
Saturday, 28 September 2024
ePaper   
Logo
দোহারে মুক্তিযুদ্ধের সনদ পওয়ায় আ. লীগ নেতার সমালোচনা

দোহারে মুক্তিযুদ্ধের সনদ পওয়ায় আ. লীগ নেতার সমালোচনা

দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি

অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পর 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন দোহার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ-সম্পাদক মো.নুরুল হক বেপারী। নুরুল হক বেপারী উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের পশ্চিমচর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেপারী পরিবারের সন্তান। তার পিতার নাম মৃত.বান্দু বেপারী।তিনি একাধিবার বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সাধারণ-সম্পাদকও বটে।

জানা যায়, গত বছরের ১৩ জুলাই-এ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের যাচাই বাছাইকরণ কমিটিতে ঢাকা বিভাগে মোট ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম চুড়ান্ত করে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব হরিলাল ঠাকুরের স্বাক্ষরিত গেজেটে প্রজ্ঞাপন জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়। স¤প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো.নুরুল হক নাম হয়েছে। বেসামরিক গেজেটে তার গেজেট নম্বর ৪২১৫।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.নুরুল হক বেপারী বলেন-মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান। ১৯৯০ এর পর তিনি তার জন্মভুমি দোহার উপজেলার পশ্চিমচর গ্রামে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের মার্চ মাসে তিনি প্রথম তার নাম মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন বলে জানান।

তিনি মঙ্গলবার তার নিজ বাড়িতে গনমাধ্যম কর্মিদের সাথে এসব কথা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দোহার উপজেলা আওয়ামীলীগ নিজেদের মধ্যে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়ছেন।কর্মিদের মধ্যে কে কোন নেতার সমর্থক ও কর্মি তা প্রমানে কর্মিরা হয়রান।রাজনীতিতে নানা বিশৃংঙ্খলা চলমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে পারছে না। নানা দ্ব›দ্বই ছড়িয়ে পড়েছে দোহার উপজেলার আনাচেকানাচে। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত পাওয়ায় আমাকে ঘায়েল করতে উঠেপড়ে লেগেছে-কতিপয় ক‚টকৌশলী একই দলের রাজনৈতিক নেতা। তিনি ইঙ্গিত করে বলেন, এবার এই ”নেতা” ঠান্ডা মাথা ব্যবহার করেছেন তার প্রতিদ্ব›িদ্বকে শায়েস্তা করতে। তিনি আরও বলেন আমাকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করছেন বীর মুক্তিয়োদ্ধা বোরহান ডাক্তারকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মিথ্যা প্রচার ও অপবাদ প্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দোহারে তিনি তাঁর জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।কিন্তু হীনমন্যতায় ভোগা কতিপয় রাজনীতিক-দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরীতে তার মাস্টার প্ল্যান পরিচালনা করছে!

এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দোহারে যুদ্ধাকালীন কমান্ডার ডা.আবুল কালাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সম্মুখ সমরে। কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সংগ্রহ,খবরাখবর আদান-প্রদান,মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও কাপড়চোপড় আনা-নেওয়া ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাজার হাট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে এনে দিয়েছেন। অনেকে তাঁদের গোলার ধান-গচ্ছিত পাট আশ বিক্রি করে অতঃপর সেই টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দিয়েছেন।এমনকি অনেকে তাঁদের জমিজমা বিক্রি করে সেই টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দিয়েছেন। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ কেউ তাঁদের পালা পশু-পালা মোরগ মুরগি-হাঁস, ছাগল জবেহ করে অতঃপর সেই গোস্ত খাওয়েছেন। তারমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের আ¤্রয়স্থল ছিলো আমার এই ভাইয়ের বাড়ি বান্দু বেপারী’র বাড়ি।আমার ভাতিজা নুরুল হক তখন ক্লাস নাইনে পড়াশুনা করতেন এবং অবসর সময়ে আমাদের এই সহযোগিতা করতেন।

নুরুল হকের নিকট আত্বীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন সংগঠক মো. রজব আলী মোল্লা বলেন, নুরুল হক যুদ্ধকালীন সময়ে পনের বৎসর হলেও তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, নুরুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ঐ সময়কার সময় সকল আর্মস এম্যুইশেনের মাধ্যমে ট্রেনিং গ্রহণ করেছেন।তাঁর মহিয়সী মা জননী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাত ও তরকারী রান্না করতেন। সেই রান্না করা খাবার মুক্তিযোদ্ধারা খেতেন। তন্মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার আবুল কালাম ওরফে কালাম ডাক্তার ওরফে কালাম চেয়ারম্যান,বীরমুক্তিযোদ্ধা রজব আলী মোল্লা, ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ খালাসী,বীরমুক্তিযোদ্ধা ওহাব মোল্লা, বীরমুক্তিযোদ্ধা মান্নান কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম-সহ অসংখ্য মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা খেতেন তা সবাই জানে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কিশোর বীরমুক্তিযোদ্ধা হবার বয়সগত যোগ্যতা হলো কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের বাঙালী হিসেবে তাঁকে প্রমাণ করতে পারেন এবং সেই সময়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন কিংবা সে সময়ে কোনভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ভ‚মিকা রেখেছেন। তাহলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবেন। আইডি কার্ড অনুযায়ী নুরুল হক বেপারী জন্ম গ্রহণ করেন-১৯৫৯ সালের জানুযারীর ১ তারিখে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণমূলক সহযোগিতা করেছেন বলে তাঁর সঙ্গীয় তিন সহ-মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।এরা হলেন- মো. তবারক বেপারী তাঁর সনদ নম্বর ১৩৫১.আব্দুল মান্নান কমান্ডার-সনদ নম্বর-১০২৭.মোহাম্মদ রজ্জব মোল্লা সনদ নম্বর-১০৭১।

এছাড়াও তাঁর পক্ষে আরও সাক্ষী দিয়েছেন।তারা হলেন- আব্দুল মান্নান কমান্ডার-লাল মুক্তি বার্তা ভারতীয় তালিকা নম্বর ০১০২০৫০৩৮৮, রেজাউল করীম লাল মুক্তি বার্তা ভারতীয় তালিকা নম্বর-০১০২০৫০৩৭০ ও মো. ওহাব মোল্লা- লাল মুক্তি বার্তা ভারতীয় তালিকা নম্বর-০১০২০৫০২৬২।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ পেতে আরও প্রমাণপত্র জমা দিয়েছেন। ডি.জি.আই-উ.এ.ও- এর নম্বর পত্র,জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি,যুদ্ধকালীন কমান্ডারদের প্রত্যয়ন পত্র ও বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আতাউল গণি ওসমানীর প্রত্যয়ন পত্র। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.বোরহান সাহেবের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা নুরুল হক বেপারীকে দেখিনি।এছাড়াও তবারক বেপারীসহ আরও অনেক ভ‚য়া মুক্তিযোদ্ধাদের মেনে নিবেন না।তারা এ বিষয়ে মাননীয় সাংসদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন