ডার্ক মোড
Wednesday, 22 January 2025
ePaper   
Logo
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রকাশ ঘোষের সংগ্রামী জীবন: ভিক্ষাবৃত্তি নয়, বাদাম বিক্রি আর গানের সুরে সমাজে দৃষ্টান্ত

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রকাশ ঘোষের সংগ্রামী জীবন: ভিক্ষাবৃত্তি নয়, বাদাম বিক্রি আর গানের সুরে সমাজে দৃষ্টান্ত

মোঃ সম্রাট তালুকদার , কালিয়া (নড়াইল)

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাবরা হাচলা ইউনিয়নের সিংগারডাঙা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রকাশ ঘোষ ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে বাদাম বিক্রি ও গান পরিবেশন করে নিজের জীবন সংগ্রাম পরিচালনা করছেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি সমাজে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

প্রকাশ ঘোষের জীবনের গল্প শুরু হয় সাধারণভাবে, তবে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় হঠাৎ চোখের সমস্যার কারণে তিনি প্রথমে দেশে ও পরবর্তীতে কলকাতা থেকে চিকিৎসা নেন।কিন্তু তাতেও খুব উপকার না হলে ধীরে ধীরে তিনি অন্ধত্ব বরণ করেন। দেশে ফিরে ১০ বছর পর পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়।তখন থেকেই সংসারের খরচ যোগাতে বাড়িতে থাকা একতারা ও খমক নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে গান করতেন আর বাদাম-ছোলা বিক্রি করেন । বর্তমানে তিনি তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে সিংগারডাঙা য় বসবাস করেন। তার একমাত্র মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন।

ভিক্ষাবৃত্তি না করার পেছনে তার অনুপ্রেরণা ছিলেন নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) সিদ্দিকুর রহমান। তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রকাশ ঘোষ সিদ্ধান্ত নেন ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করার। তিনি বলেন, “ভিক্ষা না করে বাদাম ছোলা বিক্রি করে আমার জীবনযাপন করছি। এতে লাভ কম হলেও আমি সম্মানের সাথে বাঁচতে পারছি। আগে সাহায্য চাইতে গিয়ে অনেক কষ্ট হতো, কিন্তু এখন আমি নিজের শ্রম দিয়ে জীবন চালাচ্ছি।”

প্রকাশ ঘোষ আরও বলেন, যারা তার মতো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত, তাদের প্রতি তার আহ্বান হলো, “ভিক্ষা থেকে ফিরে আসুন। অল্প আয়ের হলেও সম্মানের সাথে বাঁচা সম্ভব।”

বাদাম বিক্রির পাশাপাশি তিনি দেহতত্ত্বের গান পরিবেশন করেন। তার গানে শ্রোতারা মুগ্ধ হন। তিনি খমক এবং দোতারা বাজিয়ে গান পরিবেশন করেন। বিয়ের পর থেকে তিনি তার বাদাম বিক্রি এবং গান পরিবেশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনো খেয়াঘাটে, কখনো বিভিন্ন স্থানে । তার এই উদ্যোগ তাকে সমাজের অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক করে তুলেছে।

প্রকাশ ঘোষের জীবনযাত্রা সমাজের জন্য একটি শিক্ষা। তার এই সংগ্রামী মনোভাব এবং সম্মানের সাথে জীবিকা নির্বাহের পথচলা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন