ডার্ক মোড
Thursday, 05 December 2024
ePaper   
Logo
দক্ষিণ এশিয়ায় মেডিক্যাল শিক্ষার কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ’

দক্ষিণ এশিয়ায় মেডিক্যাল শিক্ষার কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ’


বাংলাদেশের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে নেপাল থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থী বিনোদ গুপ্ত। পড়ছেন এমবিবিএস শেষ বর্ষে। বাংলাও বলতে পারেন বেশ স্পষ্টভাবে। নেপালের ২ নং প্রভিন্সের বারা জেলার সিমরা এলাকার বাসিন্দা বিনোদ নেপাল থেকে বাংলাদেশে পড়তে আসেন ২০১৬ সালে। বর্তমানে করোনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি নেপালেই আছেন করছেন অনলাইন ক্লাস। বাংলাদেশে পড়াশোনার বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন  তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকাটির ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পাসের সহ-সম্পাদক শাহরিয়ার নোবেল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে থেকে পড়াশোনা করতে কেমন লাগে?



বিনোদ : আমার বেশ ভালোই লাগে। আমি বাংলাদেশে ৫ বছর ধরে আছি। বেশ উপভোগ করছি। আমি নেপাল আর বাংলাদেশের মাঝে খুব বেশি তফাত দেখি না।

প্রশ্ন: মেডিক্যাল পড়ার জন্য বাংলাদেশকেই কেন বেছে নিলেন?

বিনোদ : বাংলাদেশ নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ সুবিধাজনক একটি স্থান। এখানে পড়াশোনার খরচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। আর্থিক এই দিকটি বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ নেপাল থেকে বেশ কাছেও। যে কারণে আমরা বেশ সহজে যাতায়ত করতে পারি। এখানকার সংস্কৃতিও বেশ কাছাকাছি। তাই আমরা নেপালিরা প্রায়ই বাংলাদেশকে বেছে নিয়ে থাকি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে মেডিক্যাল পড়ার ব্যাপারে খোঁজ ও তথ্যাদি কোথায় পেয়েছিলেন?


বিনোদ : বাংলাদেশে আমরা সাধারণত বিভিন্ন কনসাল্টেন্সি ফার্মের মাধ্যমে আসি। নেপালে এমন অনেক কনসাল্টেন্সি ফার্ম আছে যারা বাংলাদেশে ভর্তির ব্যাপারে কাজ করে থাকে। এছাড়াও আমাদের আগে নেপাল থেকে অনেকেই বাংলাদেশে পড়তে এসেছেন। তাদের কাছ থেকেও আমরা এক ধরণের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তারো আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ কি বিদেশি শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিক্ষা প্রদান করতে পারছে? আপনার কী মনে হয়?


বিনোদ : বাংলাদেশে শিক্ষার মান প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠানভেদে শিক্ষার মান উঠানামা করতে পারে। তবে যদি আমি একটি গড় ধারণার কথা বলি তবে এটি বেশ সন্তোষজনক। বাংলাদেশ থেকে আমাদের অনেক সিনিয়র এর আগে পড়ে গিয়ে নেপালে বেশ ভাল করছেন। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা বাংলাদেশে শিক্ষা নিতে আসছি।


প্রশ্ন : নেপাল থেকে বাংলাদেশে এসে মানিয়ে নিতে কি কোনো বেগ পেতে হয়েছে? এদেশের ছেলেমেয়েদের সাথে কীভাবে সমন্বয় করেছেন?

বিনোদ : বাংলাদেশ থেকে নেপালে এসে আমি খুব বিস্তর পার্থক্য খুঁজে পাইনি। ঐতিহাসিকভাবে দুই দেশই উপমহাদেশীয় হওয়ায় দুই দেশের সংস্কৃতিতে বেশ মিল আছে। বাইরে পড়তে গেলে খাবার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বাংলাদেশে এত বেশি বৈচিত্রপূর্ণ খাবার আছে যে আমার সুবিধাজনক খাবার পেতেও কষ্ট হয়নি। পোশাকেও খুব বেশি ভিন্নতা নেই। বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগী মনোভাবের। খুব সহজেই আমি তাদের বন্ধু হতে পেরেছি।

 

প্রশ্ন : বাংলা ভাষায় আপনি অনর্গল কথা বলেন। এটি কীভাবে শিখলেন?

বিনোদ : প্রায় ৫ বছর হতে চলেছে আমি বাংলাদেশে আছি। ভাষাটা আসলে খুব বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। হিন্দি, উর্দু ও নেপালি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার অনেক মিল আছে। আমি অল্প চেষ্টাতেই বাংলা ভাষা রপ্ত করতে পেরেছি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে পড়তে এসে আপনি কি কোনো সমস্যায় পড়েছেন?

বিনোদ : না। আমি এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে পড়তে এসে কোনো সমস্যায় পড়িনি। প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রশাসনিক সবদিক থেকেই এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যত্ন নেওয়া হয়। এখানজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশি মানুষ সবাই সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।

প্রশ্ন : দক্ষিণ এশিয়ার মেডিক্যাল শিক্ষায় আপনি বাংলাদেশের কেমন সম্ভাবনা দেখেন?

বিনোদ : আমি মনে করি দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিক্যাল শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। এখানে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলক কম। যোগাযোগ ভাল। বাংলাদেশে একশোরও বেশি মেডিক্যাল কলেজ আছে। এই ক্ষেত্রটি এদেশে বেশ বড়। বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করছে। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও বাড়ছে। আনি মনে করি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ মেডিক্যাল শিক্ষার খাতে বেশ উন্নতি করবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

বিনোদ : আমি বাংলাদেশে পড়তে পেরে সন্তুষ্ট। আমার পরামর্শ হবে শিক্ষার্থী যেখানেই পড়ুক তাকে পড়াশোনা করতে হবে। নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন : করোনার এই বন্ধে বাংলাদেশকে মিস করছেন?

বিনোদ : হ্যাঁ অবশ্যই। বাংলাদেশ আর বন্ধুদের তো ভীষণ মিস করছি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন