তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা ‘সরকারি মহলেই’
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ লাখেরও অধিক মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। তামাকজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রত্যেক বছর না ফেরার দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সচেতন মহলে ধূমপানসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী আইনের দাবি জানালেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বড় একটা অংশ তামাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও সরকারি মহলের লোকজনই তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, তামাকের ভয়াবহতা আমরা সবাই জানি, এরপরও আমরা ধূমপান করছি, তামাক ব্যবহার করছি। দিনশেষ আবার আমরাই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী আইনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, একদিকে আমরা ধূমপান বন্ধ করতে চাচ্ছি, অন্যদিকে এই ধূমপানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আমাদেরই বড় একটা অংশ। স্মোকিংয়ের পক্ষে অনেক লোক, এমনকি সরকারি মহলের শক্তিশালী লোকজনও আছে। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বৈত অবস্থান আছে। এটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
শ্যামল দত্ত বলেন, দেশে বর্তমানে সবচেয়ে এলোমেলো সেক্টর হলো স্বাস্থ্য। এই খাতটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু তৎকালীন সময়েই স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছি। তবে আমাদের এখনও অনেক অর্জন বাকি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি সুন্দর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, তামাক হলো একটি প্রাণঘাতী পণ্য। তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যান তামাকের কারণে। ২০১৮ সালে তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, কখনই তামাক ব্যবহার করেননি এমন লোকদের তুলনায় তামাক ব্যবহারকারীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি। এছাড়াও তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশের বেশি। দেশে পরোক্ষ ধূমপানের হারও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। দেশে ১৫ বছরের নিচে ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে।
ডা. সোহেল রেজা বলেন, তামাক শুধু প্রাণহানিই ঘটনায় না, বড় অংকের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি। একটি তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা ওই বছর জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের অন্যতম কারণ হলো স্মোকিং জোন। এটি সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি সচেতনতা জরুরি। কারণ এতে করে অধূমপায়ীরাও ধূমপায়ীদের মতো ক্ষতির শিকার হয়। শুনেছি কিছু হাসপাতালেও ধূমপানের জন্য ডিএসএ রাখা হয়েছে। একটি সরকারি হাসপাতালেও আছে, যা সরাসরি আইনের পরিপন্থি।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ তামাকবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ছয়টি দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক ডা, ইউনুছুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফজিলাতুন নেসা মালিক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বি, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স বাংলাদেশের ম্যানেজার (অ্যাডভোকেসি) আতাউর রহমান মাসুদ প্রমুখ।