ডার্ক মোড
Friday, 23 May 2025
ePaper   
Logo
জামায়াত নেতাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা জিয়া মঞ্চ নেতার  : স্কেভেটর এর ভুয়া মালিক সেজে চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ

জামায়াত নেতাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা জিয়া মঞ্চ নেতার : স্কেভেটর এর ভুয়া মালিক সেজে চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ

 শাহ আলম মিয়া, মিঠাপুকুর (রংপুর)

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম পেশাজীবি সংগঠন রংপুর জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদ বার্তায় মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মাসের ৩০ এপ্রিল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের তুলশীডাঙ্গা বিল সংলগ্ন এলাকায় রংপুর জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব শাকিলের নেতৃত্বে ও স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী আঃ জলিলের স্কেবেটর কর্তৃক অবৈধভাবে মাটি খনন করে বিক্রির সময় মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসিল্যান্ড) একটি স্কেবেটর ও একটি মাটি পরিবহনের ট্রাক্টর জব্দ করে। জব্দ করাকালীন সময়ে স্কেবেটর (ভেকু) এবং মাটি পরিবহনের (ট্রাক্টর) মালিক পালিয়ে গেলে অভিযান স্থলে জরিমানা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট স্কেবেটর ও ট্রাক্টর মির্জাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান  ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলামের জিম্মায় প্রদান করে। এরপর আইন অনুযায়ী জরিমানা অথবা নিয়মিত মামলা হওয়ার কথা ছিলো। তাদের জরিমানা যেনো কম করা হয় এবিষয়ে এসিল্যান্ডের কাছে সুপারিশ করার জন্য চেয়ারম্যানকে মুঠোফোনে বারবার অনুরোধ করে জিয়া মঞ্চের জেলা সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ।

এদিকে জরিমানা কম বেশির বিষয়ে এসিল্যান্ড কি বলেছেন সে বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে জিয়া মঞ্চ নেতার সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথোপকথনের রেকর্ড করে সেটিকে চেয়ারম্যান জব্দকৃত স্কেভেটর (ভেকু) ছেড়ে দেয়ার জন্য ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয় জিয়া মঞ্চ নেতা শাকিল। এঘটনার সূত্র ধরে বিএনপির এক দলীয় সাংবাদিক দিয়ে জামায়াত নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের নামে ২ লাখ চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় জিয়া মঞ্চ নেতা শাকিল।

এবিষয়ে রংপুর জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ জানান, আমি বিএনপির রাজনীতি করি জন্য চেয়ারম্যান আমার বালু মাটির পয়েন্টে নিজেই এসিল্যান্ডকে ডেকে এনেছিলো। এসিল্যান্ডের নাম করে চেয়ারম্যান আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলো। এবিষয়ে আমার কাছে কল রেকর্ড আছে। পরবর্তীতে গোপনে ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক জুয়েলের কাছে ২ লাখ টাকা নিয়ে ভেকু ছেড়ে দিয়েছে। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।

এদিকে ভেকু মালিক দাবিকারি স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী জুয়েল জানান, শাকিল ভাইরা যখন ভেকু ছাড়াতে ব্যর্থ হয় তখন আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করলে ওনি ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি গত ১০ এপ্রিল শনিবার রাত আনুমানিক ৯ টা থেকে  ১১ টার মধ্যে একটা সময়ে বৈরাতী জামে মসজিদ সংলগ্ন তার ব্যক্তিগত অফিসে গিয়ে দেখা করে ২ লাখ টাকা দেয়ার পর আমার  ভাড়া করা জব্দকৃত  ভেকু মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়। তবে ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক দাবি করা জুয়েল প্রতিবেদকের কাছে ভেকুর মালিকানার কোন প্রমাণ পত্র দেখাতে পারেনি। একই সাথে চেয়ারম্যানকে গোপনে ২ লাখ টাকা চাঁদা দেয়ার ঘটনায় কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই বলে তিনি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ওই ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক আব্দুল জলিল জানান, আমার ভেকুটা বিএনপির লোক শাকিল আর জুয়েল ভাড়া নিয়েছিলো। পরে শুনি ভেকু এসিল্যান্ড জব্দ করছে। ওরা ২ দিন ঘুরিয়া যখন ছাড়াতে পারে নাই তখন আমি ভেকু মালিককে জানাইয়া তার সহযোগিতা নিয়ে এসিল্যান্ড স্যারকে অনুরোধ করি। স্যার আমার প্রতি সদয় হয়ে বলে চেয়ারম্যানের কাছে মুছলেকায় স্বাক্ষর করে নিয়ে যান। এরপরে থেকে আর এমন কাজ করিয়েন নাহ। পরে আমি চেয়ারম্যানের কাছে মুচলেকার কাগজে স্বাক্ষর করিয়া ভেকু নিয়ে মালিকের কাছে পৌঁছে দেই। এখানে কোন টাকার লেনদেন হয় নাই। জুয়েল যদি মালিক হয়া থাকে ওই মুচলেকায় স্বাক্ষর দেইল নাহ ক্যান ? আর মালিকানার প্রমাণ দেখাক। এটা রাজনৈতিক কারণে চেয়ারম্যানকে ওরা ফাঁসাইতে চাইতেছে।

এবিষয়ে স্থানীয় আদিতপুর এলাকার সাগর জানান,সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপির দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে মির্জাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ বালু মাটি উত্তোলন করে আসছে জিয়া মঞ্চের নেতা শাকিল ও তার দলীয় কর্মী জুয়েল। ইতিমধ্যে তাদের অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু পরিবহনের ফলে মির্জাপুর ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান এসব অবৈধ কাজে বাঁধা দেয়ায় পূর্ব থেকেই শাকিল ও জুয়েল ক্ষিপ্ত ছিলো। এই কারণেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চেয়ারম্যানকে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে জিয়া মঞ্চ নেতা শাকিল।

মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, সরকার পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় শাকিল ও জুয়েল বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করলে আমি বেশ কয়েকবার বাঁধা দিয়েছিলাম। এই কারণে সে পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।এসিল্যান্ড স্যার জরিমানা করতে চেয়েছিলো সেই জরিমানা যাতে কম করা হয় সে বিষয়ে শাকিল আমাকে এসিল্যান্ড স্যারকে রিকুয়েষ্ট করতে বলেছিলো। এই জরিমানা কম বেশির বিষয়ে মুঠোফোনে কথোপকথনের রেকর্ড কাটছাট করে সে পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এখানে কোন অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি। আমি কোন চাঁদা চাইনি।

মিঠাপুকুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ জানান,ভেকু ও ট্রাক্টর জব্দের সময় ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় তাৎক্ষনিক জরিমানা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভেকু ও ট্রাক্টর চেয়ারম্যান এর জিম্মায় দেয়ার পর ভেকুর মালিক পুনরায় অবৈধ বালু মাটি বিক্রি কাজের সঙ্গে জড়িত হবে নাহ এই শর্তে আমার অনুমতি নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে মুচলেকায় স্বাক্ষর করে ভেকু নিয়ে গেছে। এখানে কোন অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি। ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক আব্দুল জলিল, এটা নিশ্চিত করেই তার কাছে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জুয়েল নামের কোন ব্যক্তির ভেকুর মালিকানার বিষয়ে আমার জানা নেই।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন