ডার্ক মোড
Saturday, 28 June 2025
ePaper   
Logo
জামালপুরে মুক্তিসংগ্রাম যাদুঘরে দৃষ্টি নন্দন পদ্মফুল

জামালপুরে মুক্তিসংগ্রাম যাদুঘরে দৃষ্টি নন্দন পদ্মফুল

 

 মোঃ শাহ জামাল 

জামালপুরের মেলান্দহ গান্ধী আশ্রমের মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘরের পুকুরে ফুটে ওঠেছে পদ্মফুল। বাহারি এই ফুটন্ত ফুল মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘর এবং গান্ধী আশ্রমে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পদ্ম ছাড়াও বহু ফুলের সমাহার দর্শনার্থীদের হৃদয় স্পর্শ করে চলেছে। দূরাগত পর্যটক ছাড়াও স্থানীয়রা পদ্ম দর্শনে মুগ্ধ হচ্ছেন। পদ্মফুল গ্রামের অবলা নারী-বৃদ্ধা এবং কচিকাঁচা শিক্ষার্থীদেরও আকৃষ্ট করছে। বিভিন্ন জাতের পদ্ম’র মধ্যে সাদা, লাল, নীল এবং গোলাপীর সংমিশ্রণ অন্যতম।

জৈষ্ঠমাস সুদৃঢ় কান্ডবিহীন পদ্ম ফুলের বসন্তকাল। পানিতে জন্মানো পদ্মর স্বভাব। বর্ষার বিদায় এবং শরতের বরণের সময়ে পদ্মফুল ফোটে। স্থায়ীত্বকাল হেমন্ত পর্যন্ত। এটি মানুষ এবং প্রকৃতিকে সুশোভিত ও প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির নিয়মে ভাসমান জলে সন্ধ্যার আগে এই ফুল ফুটতে শুরু হয়। সকালে ফুটন্ত পদ্মফুল সৌরভ ছড়িয়ে প্রকৃতিকেই স্বাগত জানায়। রাতের পদ্ম নিজেকে লুকিয়ে রাখে এবং দিবালোকে প্রস্ফুটিত করে। পদ্মফুলের জীবন এই চক্রে রয়েছে মানুষের জন্য শিখনীয় উদাহরণ। পদ্ম নিজেকে বিলিয়ে অন্যকে আলোকিতকরণের মধ্যেই নতুনভাবে আলোকিত জীবন গড়ার শিক্ষা দেয়। পদ্ম গাছের পাতা ভাসমান পানিতে ফুল ফোটার মনোরম দৃশ্য মজার বিষয়। পদ্মকে জলজ ফুলের রাণীও বলা হয়।

আগেকার দিনে বিল-ঝিল-পুকুরে সারি সারি পদ্মফুল ছিল। বাংলার চির সবুজের সৌন্দর্যকে ভরে তোলতো। বর্ষা ও শরৎকালে জলাশয়ে বাহারি পদ্মফুল মানুষ ও কীটপতঙ্গকেও আকৃষ্ট করতো। ভোরে বা সান্ধ্য শীতল হাওয়ার সাথে হৃদয় স্পর্শ করতো পদ্মর দৃশ্য ও সুঘ্রান। কালের বিবর্তনে পদ্ম প্রায় বিলীন। আভিজাত্যের ছোঁয়ায় গ্রাম-শহর-বন্দরে পদ্মফুলের সংরক্ষণও কমে এসেছে।

যেমনটা দেখা যায়, জামালপুর সদর, মেলান্দহ উপজেলার, সরিষাবাড়ি ও মাদারগঞ্জ উপজেলার সংযোগ স্থল মেলান্দহের ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাশহাটিয়া গ্রামে গান্ধী আশ্রমের মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘরের আঙ্গিনায়। মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘরের ট্রাস্টি ও ঝাউগড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হিল্লোল সরকার জানান-গান্ধী আশ্রমকে ঘিরে গড়ে ওঠা মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘরে প্রায়ই দেশ-বিদেশের জ্ঞানী-গুণি-পর্যটক, রাজনীতিক, কুটনীতিক, অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী, সচিব, গভর্ণর, শিল্পী-সাহিত্যিক, কবি ছাড়াও; বহু দেশের এম্বাসেডর, কিউরেটরসহ বহু জনের আগমনকে মুখরিত করে তোলে। আগতদেরকে পদ্মপত্রে ফুল সজ্জিতের মধ্য দিয়ে অতিথিদের বরণের দৃশ্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ছোট ছোট পুকুর খুড়ে পদ্মফুলের বংশ বিস্তার ও সংরক্ষণ করা হয়।

বাংলাদেশে পদ্মফুল একটি পরিচিত নাম। পদ্ম’র ইংরেজি নাম লোটাস। যার বাংলা সমার্থ কমল, শতদল, সহ¯্রদল, উৎপল, মৃণাল, পঙ্কজ, অম্বুজ, অব্জ, নীরজ, সররুহ, নলিনী, অরবিন্দ, ইন্দিরা, কুমুদ, রাজীব, সরজিস, তামরস ইত্যাদি।

পদ্মের প্রধান মূল না থাকলেও; সুদৃঢ় কান্ডবিহীন গাছের ডগার সাহায্যে পানি শোষণেই জীবন ধারণ করে। পদ্ম ফলে আছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। এটি শাপলা জাতীয় ফুলের অন্তর্ভূক্ত। পদ্ম এবং শাপলা দু’টোরই জলে বাস, জলেই নাশ। পদ্মফুল সনাতন ধর্মের অনুসারিদের শারদীয় দুর্গোৎসবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্ম ভারতের জাতীয় ফুল এবং শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এরা হার্ব জাতীয় জলজ উদ্ভিদ। পানি ছাড়াই পদ্মফুলের বীজ প্রায় ৫ হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। উষ্ণতা অঞ্চল পদ্মফুলের জন্য বেশি উপযোগি। উষ্ণ অঞ্চলের মধ্যে ইরান, চীন, জাপান, নিউ গায়েনা, ভারত-বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়ায় পদ্মফুল বেশি জন্মে।

পদ্মফুলের সৌন্দর্য, বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতিক। সনাতন ধর্মে নারায়ণের নাভি থেকে নির্গত পদ্ম ব্রহ্মার আসন। শে^তপদ্ম বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আসন। সনাতনীরা মনে করেন পদ্ম’র মাঝেই পবিত্র আত্মা আছে। ভাবুকরা পদ্মফুলের কোমল কুড়িকে ঈশ^রের স্পর্শ এবং দর্শনকে তুলনা করেন। বৌদ্ধরা ভাগ্যের প্রতিক ও পবিত্র মনে করেন। গোলাপী পদ্মে আছে গৌতম বৌদ্ধের কিংবদন্তির ইতিহাস আছে। ভালো কিছুর সাথে তুলনা করতে গোবরে পদ্মফুল একটি বাগধারা বা প্রবাদ বাক্য।

পদ্মফুলের পাতায় বসে সর্পের সৌরভ উপভোগের কথকতাও প্রচলন আছে। জারি-সারি-সাপুড়ে উঝাদের গানেও পদ্মর বন্দনা লক্ষ্যনীয়। পদ্ম’র বীজ খেতে আসা ইঁদুর শিকারের জন্য পদ্মপাতায় সর্পের অবস্থানের কতো কল্পকাহিনী গ্রামীন বিনোদনের জীবন্ত উপজীব্য।

পদ্ম’র বীজ সুস্বাদু-পুষ্টি এবং ভেষজ বা ঔষুধি গুণে ভরপুর। আগেরকার দিনে জ¦রাক্রান্ত শিশুদের পদ্মপাতায় শুইয়ে জ¦র নিরাময় করতো। শে^তী-সর্দি-কাঁশি, ঋতু¯্রাবসহ বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে পদ্মপাতার রস মধু মিশিয়ে সেবন করা হতো। এখনো পদ্ম থেকে তৈরি মধুও চোখের রোগের প্রতিষেধক। ভিয়েতনাম যুদ্ধে খাদ্যাভাবে বুভুক্ষরা পদ্মবীজ ভক্ষণে শক্তি সঞ্চয় এবং ক্ষুধা নিবারণ করতেন। পদ্মফুলের তাৎপর্য, নান্দনিকতা এবং ঐতিহ্যগতভাবে এখনো ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় পদ্মপাতায় খাবার ভক্ষণের প্রথা চলমান। সিপাহী বিপ্লবে পদ্ম উপহারকে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার হতো। আগেকার দিনে পরিবেশ বান্ধব ও সহজলভ্য পদ্মপাতায় নিত্যপণ্য ক্রয়-বিক্রয় হতো। পদ্মফুল ও ডাটা ক্রয়-বিক্রয়েও মানুষের জীবিকা নির্বাহ করে। প্রসাধনী-অ্যারোমা ছাড়াও সুগন্ধিতে পদ্মফুল অতুলনীয়।

পদ্মচাষের জন্য দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা সুর্যোলোকের প্রয়োজন হয়। পদ্ম’র ১২-১৪ ইঞ্চি গভীরতার শীতল পানির প্রয়োজন হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে পদ্মচাষের জন্য নিকটস্থ কৃষি অফিসের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন