
চুনারুঘাটে অপহরণ নাটকের রহস্য ফাঁস : বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ তথ্য
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
চুনারুঘাটের আলোনিয়ায় জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ‘নিখোঁজ’ নাটকের আশ্রয় নিল এক পরিবার। অপহরণের অভিযোগ এনে চুনারুঘাট থানায় পিতা আব্দুল মন্নান চৌধুরীর নামে অপহরণ মামলা দায়ের করেন তাঁর মেয়ে শাহিনা । এমনকি ঘটনার নাটকীয়তা বাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা—সাংবাদিকদের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবেগঘন বক্তব্যে তুলে ধরেন ‘অপহরণের বর্ণনা। তবে পুলিশ তদন্তে নামে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বেরিয়ে আসে আসল চিত্র-আব্দুল মন্নান ছিলেন আত্মগোপনে, কোনো অপহরণ হয়নি। পুলিশ বুঝে ফেলে গোটা বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। তাদের বাচনভঙ্গি, মুখভঙ্গি, অভিনয় সবকিছু এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে, না জেনে শুনলে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক অভিজ্ঞরাও বিভ্রান্ত হতেন। সাংবাদিকদের সামনে নাটকীয় ভঙ্গিমায় বক্তব্য দিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে সৃষ্টি করেছিলেন চাঞ্চল্য। জানানযায়, প্রতিপক্ষ জিতু গংদের ফাঁসাতে আব্দুল মন্নান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি আত্মগোপনে গিয়ে নাটক সাজান, আর তার মেয়ে শাহিনা আক্তার ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ জুন রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন মন্নান চৌধুরীকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই তিনি ‘নিখোঁজ’। বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ২৪ জুন চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শাহিনা, দাবি করেন বাবাকে জীবিত উদ্ধারের। তবে মামলার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে তদন্ত শুরু করে এবং পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মন্নান চৌধুরী আসলে অপহৃত হননি। তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ উপজেলার বক্তাবলি ইউপির রাজাপুর গ্রামের মাষ্টার বাড়ি জামে মসজিদে ৪০ দিনের জন্য গত ১৭ জুন থেকে তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে বিষয়টি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ.এন এম সাজিদুর রহমানের তত্ববধানে চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অনুসন্ধানে মাঠে নামেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর ফতুল্লাহ থানা পুলিশের সহায়তায় ১৪ দিনপর ২৭ জুন চুনারুঘাট থানার মৃদুল কুমার ভৌমিক ফতুল্লাহ থেকে মান্নান চৌধুরীকে উদ্ধার করেন। এরপর বিষয়টির ভেতরের কাহিনি প্রকাশ্যে আসে। চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন, অপহরণের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তদন্ত করেছি। তদন্তে দেখা যায়, যাকে অপহৃত বলে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেই আব্দুল মন্নান চৌধুরী স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। অপহরণের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আমরা পাইনি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে সনাক্ত ও উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি সাজানো নাটক। প্রাথমিকভাবে অভিযোগকারীর কথার সঙ্গে ঘটনার বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায়নি,এখন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় রা বলছে, এটি একটি নজিরবিহীন প্রতারণার উদাহরণ। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী । ভুক্তভোগী পক্ষের জিতু মিয়া চৌধুরী বলেন, ৬ মাস পূর্বে আমার বড়ভাই মফিল মিয়াকে হত্যা করা হয় এর নেপথ্যে ছিলেন কতিথ মন্নান চৌধুরী, মামলা থেকে রেহাই পেতে এমন নাটক করে অপহরণ মামলা করে মান্নানের মেয়ে "আমরা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছি। আদালতের মাধ্যমে এর বিচার চাই। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়া বলেন, এধরনের সাজানো নাটক শুধু প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলে না, বরং প্রকৃত অপরাধ বা অপহরণ ঘটনা তদন্তেও বিঘ্ন ঘটায়। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যেই এমন মিথ্যা মামলা করা হয়। এমন ঘটনায় প্রকৃত ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিও বাধাগ্রস্ত হয়। এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে বলছেন, এভাবে সাজানো নাটক আইনের অপব্যবহার এবং ভিকটিমদের প্রতি চরম অবিচার। প্রশাসন যথাসময়ে সত্য উদঘাটন করায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তবে শাহিনার দাবী তারপিতাকে জিতু গংরা অপহরণ করেছে কিন্তু তাবলিগ জামাতের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি । পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমান বলেন, চুনারুঘাটে কথিত অপহরণের ঘটনায় তদন্তে দেখা গেছে, আব্দুল মন্নান চৌধুরী অপহৃত হননি, তিনি স্বেচ্ছায় ৪০ দিনের জন্য তাবলিগ জামাতে ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা দুঃখজনক। আজ তাকে আদালতে হাজির করা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।