ডার্ক মোড
Sunday, 23 February 2025
ePaper   
Logo
ঘরভাঙা আতঙ্কে নারী ফুটবল দলের অপরিহার্য ডিফেন্ডার মাসুরার পরিবার

ঘরভাঙা আতঙ্কে নারী ফুটবল দলের অপরিহার্য ডিফেন্ডার মাসুরার পরিবার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া একখন্ড জমি। জমি ছিল খানা-খন্দে ভরা। সেই খানা-খন্দ ভরাট করতে খরচ হয়েছিল তিন লক্ষ টাকা। সেই টাকাও দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেই জমিতে ইটের দেয়াল আর টিনের চাল তৈরি করে থাকেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অপরিহার্য ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের মা-বাবাসহ পরিবার। অনেক কষ্টে ঘর বেঁধে সেখানে সবজির বাগান আর গাছ লাগিয়েছেন মাসুরার পিতা রোগগ্রস্ত অসহায় রজব আলী। ২০১৮সালে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের আসরে মাসুরা পারভীনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো বাংলাদেশ। তাদের নিজস্ব জমি না থাকায় প্রধানমন্ত্রী পক্ষে সরকারি জায়গায় দেওয়া হয়। কিন্তু তার ঘরটি ভেঙে ফেলার জন্য ক্রস চিহ্ন দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে ঘরভাঙা আতঙ্কে রয়েছে মাসুরার পরিবার।
সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরাদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির পিছনে তিনটি ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ২০১৮ সালে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের আমার মেয়ের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর নজরে আসলে তিনি আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেই জমিতে ১৫ ফুট পানি ছিলো বিভিন্ন দপ্তরে বহুদিন হাঁটাহাঁটি করার পর বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের ৩ লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। সেই সময় মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিলো ২ দিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। ২৬ দিনে মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরী করে মাত্র ২দিন থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যায় মাসুরা।
তিনি আরও বলেন, এত টাকা খরচ করে আজ এক প্রকার সর্বশান্ত। আমি অসুস্থ। আয় করতে পারিনা। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। সরকারিভাবে পাওয়া ৮ শতক জমিতে ঘর করেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি, তিনি বলেছেন, সড়ক বিভাগের সীমানার মধ্যে আপনার বাড়ি পড়লে আমাদের করার কিছু নেই। খুবই চিন্তায় আছি। ঘর ভেঙে দিলে নতুন ঘর কিভাবে তৈরী করবো।
তিনি আরও বলেন, এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দো-চালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ভেঙে পড়ছিলো, দেয়াল খসে পড়ছিলো। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে স্থানীয় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না।
মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরবে। দেশের মানুষ আনন্দ করছে। আমরা তো চিন্তাই আছি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় থাকায় সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। আমাদের ঘরের পিছনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। খুবই চিন্তায় আছি। ঘর ভেঙে দিলে থাকবো কোথায়।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ক্রস চিহ্ন দিলে সরকারিভাবে জমি পাওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে উচ্ছেদের দিন থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবেন। ভুল করেও ক্রস দিতে পারে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন