
খালেদা জিয়াকে কারাগারে নির্যাতন: জড়িতদের বিচারের দাবি মির্জা আব্বাসের
নিজ্বস প্রতিনিধি
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন আব্বাস।
মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের অত্যন্ত খারাপ ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখা হয়।
তিনি আরও জানান, খালেদাকে এমন একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল যেখানে ইঁদুর ও পোকামাকড় দৌড়াদৌড়ি করতো। সেখানে মানুষ তো দূরের কথা, প্রাণীদেরও বাঁচার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
তিনি বলেন, কয়েকজন ডেপুটি জেলার ও জেলার অন্যায়ভাবে তাকে ছাদের ওপরে একটি কক্ষে রেখেছিল। আজ আমি এই অনুষ্ঠান থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলজীবনে তার ওপরে যে অত্যাচার হয়েছে, যে নির্যাতন হয়েছে, কারা এর পেছনে দায়ী তাদের সবার বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
তিনি স্মরণ করেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের ১৫ দিন পর দেখা করার সুযোগ ছিল। দেখেছি, তিনি কী রকম মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। বাইরে থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি, তবুও ব্যর্থ হয়েছি।
তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। বুঝতে পেরেছি তাঁকে তখন বোধ হয় খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেওয়া হতো।
মির্জা আব্বাস খালেদার দীর্ঘ জীবন, সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা বিশ্বে নেতৃত্বের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তিনি গৃহিণী থেকে জনগণের পাশে দাঁড়ানো নেতা হয়ে ওঠেন, দল ও দেশকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব দেন।
খালেদার শক্তি ও নিষ্ঠার প্রশংসা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, আমরা যারা কয়েকজন তাদের সাথে কাজ করেছি তারা নানা চাপের মধ্যে দেশনেত্রীর দৃঢ় মনোবল দেখেছি। গণতন্ত্রের প্রশ্নের তার আপোষহীন নেতৃত্ব এবং নেতা-কর্মীদের প্রতি তার যে ভালোবাসা ও স্নেহ, তা তুলনাহীন।
২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এ সময় তাকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে অস্বাস্থ্যকর সেলে রাখা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুপারিশ করলেও বার বার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদন তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার নাকচ করে দেয়।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। এ সময় তাকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’তে গৃহবন্দি রাখা হয়।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন মসজিদে ও এতিমখানা-মাদ্রাসায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দলের চেয়ারপার্সনের আরোগ্য কামনায় খালেদার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনায় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে শহীদদের শান্তির জন্য মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানও বক্তব্য রাখেন।