
কাঠগড়ায় সাথী-আফ্রিদির আলাপচারিতা, মুখে কুলুপ হাজী সেলিম-সোলায়মানের
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় আদালতের কাঠগড়ায় সোমবার মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে আলাপচারিতায় মেতে উঠতে দেখা গেল।
তবে সাবেক সাংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও তার ছেলে সাবেক সাংসদ সোলায়মান সেলিমকে দেখা গেল দূরত্ব রেখে অবস্থান করতে; তাদের মধ্যে কথা বলতেও দেখা যায়নি।
এদিন ঢাকার চানখারপুলে ঝুট ব্যবসায়ী মনির হত্যা মামলায় হাজী সেলিম ও তার ছেলের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ছিল। আর মাইটিভির পরিচালক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবা সাথীকে আরও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি ছিল।
তাদেরকে কারাগার থেকে সকাল ১০টার কিছু আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে তোলা হয় কাঠগড়ায়। এসময় তাদের হাতে কড়া, মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।
কাঠগড়ায় সবার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাথী। বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ান তৌহিদ আফ্রিদি। এসব তারা আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন।
একপর্যায়ে সাথী আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। তৌহিদ আফ্রিদি বাইরে তাকিয়ে স্বজনদের খুঁজতে থাকেন। তখনো তার কোনো স্বজন আদালতে আসেনি।
আর হাজী সেলিম ও সোলায়মান সেলিম দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন; তারা কোনো কথা বলেননি।
১১টা ৪ মিনিটের দিকে ঢাকার মহানগর হাকিম জি এম ফারহান ইশতিয়াক এজলাসে আসেন। প্রথমে দুর্জয় আহম্মেদ হত্যাচেষ্টা মামলায় সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। বিচারক তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই গোলাম কিবরিয়া খানের কাছে জানতে চান, তারা এজাহারভুক্ত আসামি কি না? তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তারা এজাহারভুক্ত আসামি।
বিচারক জানতে চান, কত নম্বর আসামি। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তারা ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আসামি। পরে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়।
এদিকে মিরপুর মডেল থানার মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যা মামলাতেও নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেওয়া হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলেন মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক সাজ্জাদ রোমান।
এরপর হাজী সেলিম ও সোলায়মান সেলিমের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড আবেদনর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রাণনাথ তাদের রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
তিনি আদালতকে বলেন, এর আগেও তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। কিছু উদ্ধার হয়নি।
হাজী সেলিম সাহেব আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান। এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা হাজী সেলিম আকার ইঙ্গিতে বলেন, তিনি কথা বলতে পারেন না।
এরপর আইনজীবী প্রাণনাথ বলেন, “তিনি জেলে আছেন। প্রয়োজনে তাকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”
এরপর আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদি
এরপর হাজী সেলিম ইশারায় জানতে চান, কী হলো? তখন একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা সোলায়মান সেলিম বলেন, দুজনকেই একই মামলায় চার দিনের রিমান্ড দিয়েছে।
রিমান্ডের কথা শুনে হাসেন হাজী সেলিম।
এদিকে শুনানিকালে আদালতে উপস্থিত হন তৌহিদ আফ্রিদির মা-বোনসহ স্বজনরা। তারা আদালতে প্রবেশ করতে চান। তবে পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। পরে আদালতের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
সোয়া ১১টার দিকে তাদের এজলাস থেকে বের করে আবার হাজতখানায় নেওয়া হয়। দ্রুততার সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা তাদের কারাগারে নিয়ে যাচ্ছিল। এতে চটে যান নাসির উদ্দিন সাথী ও তৌহিদ আফ্রিদি। পরে দ্রুততার সাথেই তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে আদালতে তোলার সময় তৌহিদ আফ্রিদি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “দোয়া করবেন, আমার স্ত্রীর ডেলিভারি হবে।”
দুর্জয় হত্যাচেষ্টা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানের সময় ২০ জুলাই মধ্যবাড্ডার ইউলুপ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ করা হয়। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুর্জয় নামের এক ব্যক্তির দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া মাথায় গুরুতর আঘাতও পান তিনি। ওই সময় তাকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।
পরে পথচারীরা তাকে এ এম জেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তাকে পাঠিয়ে দেয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন দুর্জয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ২০ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯০ জনের নামে বাড্ডা থানায় মামলা করেন দুর্জয়।
মাহফুজ হত্যা মামলার এজাহার অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের দিন ৫ অগাস্ট দুপুরে মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স ও মিরপুর মডেল থানার মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে ছাত্রজনতার মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আক্রমণ করে। তখন আসামিদের গুলিতে শ্রাবণ আহত হন। তাকে রিকশায় করে মিরপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঝুট ব্যবসায়ী মনির হত্যা মামলার বিবরণ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন চানখারপুল এলাকায় ছাত্র জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ঝুট ব্যবসায়ী মনির। দুপুরে আসামিদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোজিনা আক্তার গত ১৪ মার্চ শাহবাগ হত্যা মামলা করেন।