
এনার্জি টক-২ “এনার্জী এক্সপানসনঃ কনফ্লিক্ট উইথ ইকোনমি, ইকোলজী অ্যান্ড জাস্ট ট্রানসজিশন ইন বাংলাদেশ"
নিজস্ব প্রতিনিধি
বাংলাদেশ এখন জ্বালানি সম্প্রসারণ কৌশলের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। সরকার বৃহৎ পরিসরের জ্বালানি প্রকল্প—বিশেষ করে কয়লা, এলএনজি এবং আমদানি করা, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে, যেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন অপরিহার্য, তবে তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ও সামাজিক স্থায়িত্বের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। উন্নয়নকে পরিবেশগত ন্যায়বিচার এবং অর্থনীতি ও পরিবেশের দ্বন্দ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হলে, একটি দ্রুত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশ-সচেতন জ্বালানি রূপান্তর এখন অত্যন্ত জরুরি। এই রূপান্তরের কেন্দ্রে থাকতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। দ্রুত জ্বালানি রূপান্তরের জন্য যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করতে, তাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষিত করে তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরদার করতে, তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ও তাদের জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দিতে আজ ২৩ আগস্ট ২০২৫, বিকেল ৩:০০টায়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর অডিটোরিয়াম, ঢাকায় একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন “জ্বালানি সম্প্রসারণ: বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরের সঙ্গে সংঘাত” শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়জন করা হয়। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ব্রাইটার্স, ক্লাইমেট ফ্রন্টিয়ার, গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, ওএবি ফাউন্ডেশন, সচেতন ফাউন্ডেশন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, যুব পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা এবং ইয়ং ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), হারজিত সিং, কৌশলগত উপদেষ্টা, ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি ও শরীফ জামিল, সদস্য সচিব, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)। ওনারা বাংলাদেশের জ্বালানি সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দ্বন্দ্ব এবং ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এতে অংশগ্রহণ করেন তরুণ জলবায়ু নেতা ও কর্মী, শিক্ষার্থী ও গবেষক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, সিভিল সোসাইটি সংগঠন এবং নীতিনির্ধারকরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন ফারিয়া অমি এবং সূচনা বক্তব্য দেন সাইদূর রহমান সিয়াম। সূচনা বক্তব্যে সাইদূর রহমান সিয়াম বলেন- প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংশ না করে জ্বালানী চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ তরুনদেরকেই নিতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর গবেষনা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার বক্তব্যে বলেন জ্বালানী সম্পদ এবং জ্বালানী উপকরন এই দুই বিষয়ের সম্পর্কে আমাদের ধারনা থাকতে হবে। জ্বালানি নিয়ে চিন্তা করতে হলে সাপ্লাই চেইনকে বিবেচনায় আনতে হবে। সাপ্লাই চেইন এর আওতায় জ্বালানি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ব্যবস্থা, জ্বালানির ব্যবহার, রুপান্তরকরন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। একেক ধরনের জ্বালানির একেক রূপ আছে। কোন জ্বালানি কোন রূপে আছে তা বুঝতে হবে। জ্বালানী সম্পদ থেকে জ্বালানী চাহিদায় রুপান্তরের জন্য ভৌত অবকাঠামো, মানবসম্পদ, কারিগরি প্রযুক্তি ও নীতি থাকা দরকার। তা না হলে জ্বালানী চাহিদা পূরন সম্ভব নয়। জ্বালানী অন্যান্য সম্পদের মত সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। সব জ্বালানি সব ক্ষেত্রে সমানভাবে ব্যবহার করা যায় না। গ্যাস থাকার কারনে আমাদের দেশ গ্যাস জ্বালানি নির্ভর। বিশ্বব্যপি জ্বালানি বিক্রেতা অল্প কয়েকটি দেশ তাই সঠিকভাবে মুল্য নির্ধারন হয় না। আমরা জ্বালানির জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল। আমাদের গ্যাসের মজুদ দিনদিন কমে যাচ্ছে। আমরা আমদানি করা গ্যাস দিয়ে চাহিদা মেটাতে চাচ্ছি। এজন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এজন্য আমাদেরকে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জনাব শরীফ জামিল বলেন বাংলাদেশে জ্বালানি সম্প্রসারণ শুরু হয় ২০০০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টির মাধ্যমে। বিদ্যুতের কথা চিন্তা করে তখন পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান তৈরি করা হয়। এই জন্য আইনী কাঠামো তৈরি হয়। সে কারনে আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এরপর ২০১০ সালে আবার জ্বালানি পরিকল্পনা করা হয় যেখানে কয়লার ব্যবহারের পরিমান মোট জ্বালানির শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি। এটি বাস্তবায়িত হলে মারাত্বক মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে চিমনির মাধ্যমে ছাই ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তিনি রামপাল হাব, পায়রা হাব, মাতারবাড়ি-মহেশখালি হাব ইত্যাদি সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন যে আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যগত স্থানগুলোর সবই ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। তাই এসব স্থানে ব্যাপক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই এর আস্তরণ পড়ে ফসলি ক্ষেত, গাছ, নদীর পানি নষ্ঠ হচ্ছে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ফসিল ফুয়েল ননপ্রলিফারেশন ট্রিটি এর কৌশলগত উপদেষ্টা হারজিত সিং বলেন আমেরিকা পৃথিবীতে বড় পরিবেশ দূষণকারী দেশ। এখন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সম্পদের উপর কার নিয়ন্ত্রন থাকবে। কার্বন নিঃসরন কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানির কৌশলগত প্রযুক্তি সম্পদের অধিকারী অন্যতম দেশ চায়না। তাই এ বিষয়ে অগ্রগতি অনেক দূরূহ। উত্তর-দক্ষিন সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ছে। যার ফলে দরিদ্র দেশগুলোতে জ্বালানি ব্যয় বেড়েই চলেছে এবং জনগন এই ব্যয় বহন করতে পারছে না। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে ঝুকিপূর্ণ দেশ। তাই বাংলাদেশকে এ বিষয়ে বৈশ্বিক পরিসরে আরও কথা বলতে হবে। জনগনকেও আরও সচেতন হতে হবে।
প্রতিটি আলোচনার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নিবন্ধিত ৩৮৫ জন তরুণ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সচেতন ফাউন্ডেশন এর হাবিবুর রহমান উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
