
এনবিআরে আন্দোলন: ‘ইন্ধনদাতা ব্যবসায়ী’ কারা, জানতে চায় পরিষদ
নিজস্ব প্রতিনিধি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে অর্থ উপদেষ্টা যে ব্যবসায়ীদের ‘ইন্ধন’ দেখছেন, তদন্ত করে তাদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
এছাড়া আলোচনার জন্য উপদেষ্টা যাদের আহ্বান জানিয়েছেন সে তালিকায় পরিষদের প্রতিনিধিরা নেই তুলে ধরে তাতে অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা।
এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে অপসারণের দাবিতে অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালনের পর বুধবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এদিন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এনবিআরে সংস্কার করার কারণ হচ্ছে, এখানে আগে অনেক রকম অসঙ্গতি ছিল। সেখানে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নেই। এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের সরকারের সময় কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী লাভবান হতেন, ভালো যারা তারা সুবিধা পেতেন না। এনবিআর সমান সুবিধা নিশ্চিতের ধারে কাছেও ছিল না।
“অতএব আমি অনুমান করে বলছি, এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ আছে। না হয় ক্যারিয়ার ট্যারিয়ার নিয়ে ওরা হঠাৎ করে এতো চটে গেল কেন? অন্য কোনো বিষয় যদি না থাকে তাহলে এমন হওয়ার কথা না। এটা হলো আমার অনুমান। আমি ব্যবসায়ীদের ওভাবে দোষ দিচ্ছি না।”
এছাড়াও আমার দেশ পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাতকারে সালেহউদ্দিন বলেন, “এখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের ইন্ধন রয়েছে। কারণ, এসব ব্যবসায়ী নানা অবৈধ সুবিধা পেয়ে আসছে। তারা এখন ভাবছে, নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে সুবিধাগুলো আর পাবে না। তাই এনবিআর কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে বিষয়টি অন্যদিকে নিচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের তরফে বলা হয়, “উপদেষ্টা এই সাক্ষাৎকারে একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ইন্ধনে এনবিআরে আন্দোলন চলছে বলে মন্তব্য করেছেন করেছেন। কে বা কারা এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী- তা তদন্ত করে সরকার দেশবাসীকে জানাক, এটা আমাদের দাবি।
“আমরা আগেও বলেছি, দেশবাসীও দেখেছে যে, আমাদের কর্মসূচী ছিল একেবারেই স্বতস্ফূর্ত ও টেকসই সংস্কারের তাগিদে। এনবিআরের ইতিহাসে এই প্রথম ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে এত দীর্ঘদিনের ও এত বড় কর্মসূচি চলছে।
“এর পেছনে কোনো গোষ্ঠীর ইন্ধন খোঁজার প্রয়াস মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত তথ্য না পাওয়ার কারণেই ঘটেছে বলে আমাদের মনে হয়।”
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়, “আমরা বরাবরই আলোচনার পক্ষে। আর পক্ষে ছিলাম বলেই ২০ মে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করি।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সে সভায় অর্থ উপদেষ্টাসহ তিনজন উপদেষ্টা, রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যরা, এনবিআরের সাবেক তিনজন সদস্য, সরকারের দুইজন সচিব ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধিসহ ২৬ জন উপস্থিত ছিলেনঢাকায় রাজস্ব ভবনে আন্দোলনে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
“সভায় মোট বরাদ্দকৃত সময় ছিল ৫৫ মিনিট, যার মধ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুইজন প্রতিনিধিকে মোট ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়।
“আবার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার পরও আলোচনা শেষে ফলপ্রসূ হয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান। অর্থাৎ, আমাদের আলোচনার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।”
বৃহস্পতিবার আলোচনার প্রস্তাবের বিষয়ে ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে, সরকার ২৫ মে জারিকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত না করে বরং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করার অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এছাড়া এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের আগামীকালের আলোচনার জন্য আহ্বান করেননি।
তাদের কোনো প্রতিনিধির আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ না রাখায় তাতে অংশগ্রহণ করবে না পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকাসহ অন্য নেতারা।
এনবিআর চেয়ারম্যানকে ‘আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী’ আমলা আখ্যা দিয়ে এবং তার বিরুদ্ধে ‘দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত’ থাকার অভিযোগ তুলে ঐক্য পরিষদ সোমবার নতুন কর্মসূচি ডেকেছে।
আগামী শুক্রবারের মধ্যে চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে শনিবার থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে ঘোষণাও করা হয় পরিষদের তরফে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ আওতা বহির্ভূত থাকবে।
রাজস্ব সংস্কারে সেমিনার করতে গেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে কক্ষ বরাদ্দ না দেওয়া, আগের আন্দোলনে জড়িতদের বদলি আদেশ জারি, এনবিআর ভাগ করে দু'টি বিভাগের যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল তা বাস্তবায়নে গঠিত সমন্বয় কমিটির মধ্যে পরিষদের প্রতিনিধিত্ব না রাখায় চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জোরালো হয়েছে।