ডার্ক মোড
Sunday, 25 May 2025
ePaper   
Logo
আওয়ামীলীগের ১৫ বছরে বিএনপি নেতা শাহিন মৃধা অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক : গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও হচ্ছেন না গ্রেফতার

আওয়ামীলীগের ১৫ বছরে বিএনপি নেতা শাহিন মৃধা অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক : গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও হচ্ছেন না গ্রেফতার

গোফরান পলাশ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

আওয়ামীলীগ শাসনামলের ১৫ বছরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বিএনপি নেতা শাহিন মৃধা। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর তিনি নিজেকে বিএনপি'র ডাক সাইটের নেতা দাবি করেন। তৃণমূল বিএনপি'র একজন নেতা হয়েও আওয়ামীলীগের শেল্টারে গত ১৫ বছরে তিনি বনে যান অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক। আয় কর বিভাগ সহ দুদক তার এ বিপুল অর্থ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে কখনও অনুসন্ধান করেনি। এমনকি প্রতারণার একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা, মাল ক্রোকের আদেশ সহ পলাতক হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও তিনি গ্রেফতার হননি।

 
জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুবুর রহমানের আশীর্বাদ পুষ্ট ছিলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর ছত্র ছায়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন মরিচ বুনিয়া গ্রামে গড়ে তোলেন মিফতা ট্রেডার্স নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর শেল্টারে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে কয়লা সার্ভিস জেটি ঘাট নির্মাণ সহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম নেন শাহিন। এরপর ক্রমশ: তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আসা জাহাজ থেকে কয়লা আনলোডিং, জেটিঘাট নিয়ন্ত্রণ সহ শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিফতা ট্রেডার্স আলোচনায় উঠে আসে। বিদেশী জাহাজে আসা মূল্যবান পন্য সামগ্রী লাইটার জাহাজে তার সার্ভিস জেটি ঘাটে আনলোড করে প্রতারণা শুরু করেন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে। আত্মসাৎ করেন কোটি কোটি টাকা মূল্যের মালামাল। 

সূত্র জানায়, চট্রগ্রামের সালাম মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. আনিস উদ্দীনের ৭০ টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ক্রেন গাড়ী মাসিক ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেন বিএনপি নেতা শাহিন মৃধা। এতে ভাড়া বাবদ তার কাছে অনিসের পাওনা হয় ৪২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বারংবার ভাড়া টাকা চেয়েও না পাওয়ায় ভুক্তভোগী আনিস ৫ আগষ্ট ২০২২ শাহিনের মিফতা ট্রেডার্সে এসে ভাড়া টাকা সহ ক্রেনটি ফেরত চাওয়ায় শাহিন মৃধা ভাড়া টাকা তো দূরের কথা ক্রেন গাড়ীটিও ফেরত না দিয়ে তার মাস্তান বাহিনী লেলিয়ে দেয়। অত:পর আনিস উদ্দীন ৮ আগষ্ট ২০২২ শাহিনকে আসামী করে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে (সিআর-১০৪২/২২) মামলা আনয়ন করেন।

সূত্রটি আরও জানায়, চট্রগ্রামের জেএসি শিপিং লাইন্সের সাথে পন্য আনলোড, সংরক্ষন ও পরিবহন সংক্রান্ত কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন বিএনপি নেতা শাহিন মৃধা। এজন্য সার্ভিস জেটি নির্মানের জন্য শিপিং লাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি ৮২ লক্ষ টাকা অগ্রিম নেন। এরপর শিপিং লাইন্সটির লাইটার জাহাজে আসা ২১০০ পিচ পাইপ পাইলের মধ্য থেকে ৫০০ পিচ পাইপ পাইল, যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ ২ হাজার ১৯৫ টাকা, শাহিন মৃধা অন্যত্র পাচার করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেন।  এ ঘটনায় শিপিং লাইন্সটির ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে ১মার্চ ২০২৩ কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রতারনা ও আত্মসাতের অভিযোগে (সিআর-১৯৩/২৩) মামলা করেন।

সূত্রটি জানায়, কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের মো. নাছিম খানের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লভ্যাংশ প্রদানের শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ধার নেন শাহিন। অত:পর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিনেও পরিশোধ না করে আত্মসাত করেন শাহিন। ভুক্তভোগী নাছিম খান ১২ এপ্রিল ২০২৪ আদালতের (মামলা নম্বর-সিআর-৩৫৭/২৩) দ্বারস্থ হন। এভাবে সিরিজ প্রতারণা ও আত্মসাতের মধ্য দিয়েই শাহিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। ছেলে মেয়ে কে লন্ডনে পাঠিয়ে যেকোনো সময় নিজেও উড়াল দিতে পারেন বলে দাবি সূত্রটির। 

এদিকে ১৩ মে ২০২৫ আধিপত্য বিস্তার ও  তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্ভিস জেটি ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শাহিন মৃধার মিফতা ট্রেডার্সে হামলা, অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শাহীন মৃধা ১৪ মে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল তালুকদার, ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ তালুকদার, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মো. সুমন গাজী, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুয়েল ইকবাল, সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম দিপু সহ ২১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামী করে থানায় মামলা করেন। মামলায় আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়। ২২ মে ২০২৫ উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় ফেরারী শাহিন মৃধা'র বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের নিয়ে পুলিশের সমালোচনা করে বিএনপি।    
 
ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপি'র সম্পাদক মো. ফিরোজ তালুকদার বলেন, শাহিন মৃধা বিলুপ্ত লালুয়া ইউনিয়ন বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানের হাতে ফুল দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।' উপজেলা বিএনপি'র জ্যেষ্ঠ নেতা কে এম জালাল উদ্দিন বলেন, 'আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে তার বিরুদ্ধে অগনিত মানুষের সাথে বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তার একটা নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। তার ব্যক্তিগত মিফতা ট্রেডার্স অফিসটি একটি মিনি বার। সেখানে মদ, গাঁজা, ইয়াবা সেবন চলে।'

উপজেলা বিএনপি'র সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হাফিজুর রহমান চুন্নু বলেন, 'শাহিন মৃধা বিএনপি'র কেউ না, আওয়ামী লীগের দোসর। সম্প্রতি এ ফেরারী আসামি আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বিএনপি'র নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।' হাফিজুর রহমান চুন্নু আরও বলেন, 'পুলিশের সখ্যতায় ফেরারী আসামি হয়েও গ্রেফতার  হচ্ছেন না তিনি।'
 
এ বিষয়ে শাহিন মৃধার বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
 
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, 'পুলিশের সাথে শাহিন মৃধার সখ্যতা আছে বললে তো হবে না, প্রমাণ দিতে হবে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।' ওসি আরও বলেন, 'আইন শৃংখলা সভায় এ বিষয়টি যিনি উত্থাপন করেছেন তার বোন জামাইয়ের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারী পরোয়ানা আছে। আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।'

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন