ডার্ক মোড
Wednesday, 04 December 2024
ePaper   
Logo
সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ দুদক কমিশনার জহুরুল এর বিরুদ্ধে

সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ দুদক কমিশনার জহুরুল এর বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগে আগে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই দুদকেরই একজন সাবেক কমিশনার তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের চলাফেরায় চালকসহ সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন। দুদক সূত্র জানায়, সাড়ে তিন বছর আগে বেআইনিভাবে সংস্থাটি থেকে গাড়িটি বরাদ্দ নেন তিনি।

গত মঙ্গলবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাড়িটি বুঝিয়ে দেননি জহুরুল হক। চালকসহ গাড়িটি আরও এক মাস পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে চান তিনি।

দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জহুরুল হকের নিজের ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ ছিল। এর বাইরে ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি চালকসহ আরেকটি গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহার করার জন্য বরাদ্দ নেন। সেই গাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে অফিসে যাতায়াত করতেন।

বরাদ্দ নেওয়া গাড়িটির চালক মো. সাদ্দাম হোসেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে গাড়িটি চালাচ্ছি। গাড়িতে স্যারের স্ত্রী ও ছেলে অফিসে যাওয়া–আসা করেন। এটি আরও এক মাস স্যার রাখবেন বলে জানিয়েছেন।’

নাম প্রকাশ না করে দুদকের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দুদকে গাড়ির সংকট। উপপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও শেয়ার করে গাড়ি ব্যবহার করেন। সেখানে বেআইনিভাবে একজন কমিশনার প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে একটি গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। অথচ দুদক সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জহুরুল হক পদত্যাগ করার পর গাড়িটি ফেরত চাওয়া হয়েছিল। তখন কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জুডিশিয়াল কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগিতা করেন না। এদিকে, তিনি মৌখিকভাবে গাড়িটি আরও এক মাস ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন। এতে রাজি হয়েছেন দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

সূত্র আরও জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগে কোম্পানিটির দুই কর্মীর বিরুদ্ধে গত বছর মামলা করেছে দুদক। অথচ দুদকের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা একই অপরাধ করেছেন।

চালকসহ গাড়ি বরাদ্দের জন্য দুদকে আবেদন করেছিলেন সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের একান্ত সচিব। সেই আবেদনে বলা হয়েছিল, জহুরুল হক ধানমন্ডির সরকারি বাংলোতে বসবাস করেন। তিনি তাঁর অনুকূলে চালকসহ অতিরিক্ত একটি গাড়ি বরাদ্দ চান। গাড়ি ব্যবহার বাবদ সরকারি ফি তিনি পরিশোধ করবেন। তাঁর বাসভবনে চালকের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

পরে গাড়ি বরাদ্দ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়। সেখানে বলা হয়, কমিশনার জহুরুল হকের ইচ্ছা অনুযায়ী চালক সাদ্দাম হোসেন ও ঢাকা মেট্রো–গ৪২–৭৬৩০ গাড়িটি সার্বক্ষণিক ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেওয়া হলো। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তা নিজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি পাবেন। তবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই।

তবে সাবেক কমিশনার জহুরুল হক কীভাবে গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছিলেন, জানতে চাইলে সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘এটা পরিবহন বিভাগ দেখে। এ বিষয়ে তারা বলতে পারবে।’

গাড়িটি বরাদ্দ দিয়েছিলেন দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল। এ বিষয়ে জানতে তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি। একই বিষয়ে জহুরুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও বার্তা পাঠানো হয়। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন