ডার্ক মোড
Friday, 29 March 2024
ePaper   
Logo
রেলের ৭শ একর জমি রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে

রেলের ৭শ একর জমি রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রেলের জমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার কমপ্লায়েন্স নীরিক্ষা প্রতিবেদনে প্রায় ৭শ একর জমি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত ও নামজারি হয়ে যাওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে। রেলওয়ের অধিগ্রহণকৃত জমি সিএস, এসএ, আরএস, বিএস জরিপের সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় তা বেদখল হয়ে গেছে।

রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৬০ একর। এর মধ্যে রেল বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে ৩১ হাজার ৩১১ একর জমি। এ ছাড়া ৭৯৫ দশমিক ১৯ একর মৎস্য, ৩০ দশমিক ৫৫ একর নার্সারি, ১২ দশমিক ৪৭ একর সিএনজি, ৪৫ দশমিক ৬৭ একর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২১০ দশমিক ৬৯ একর জমি সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে লাইসেন্সের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া আছে। বাণিজ্যিক লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে ৯০৯ দশমিক ৮৪ একর জমি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ের প্রায় ৪ হাজার ৪৬৫ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। তবে রেলওয়ের হিসাবে বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে।

কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬-এর নির্দেশনা পরিপালন না করা এবং অধিগ্রহণকৃত সব ভূমির স্বত্ব রেকর্ড সংরক্ষণ না করা, জমির সীমানা চিহ্নিত না করা, কৃষি, মৎস্য, বাণিজ্যিক প্রভৃতি জমির রেকর্ড সংরক্ষণ না করা এবং সব প্রকার জমির হিসাব রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ না করায় রেলের প্রকৃত জমির হিসাব সংরক্ষণে অনিয়ম হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম), রাজশাহীর অধীনে বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ও ২ (পাকশী ও লালমনিরহাট) কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলায় রেলওয়ের ৬৬৮ দশমিক ৫৭ একর ভ‚মি অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাকশীতে ৪১৭ দশমিক ৪৮ একর এবং লালমনিরহাটের ২৫১ দশমিক ০৯ একর। এই ভূমি রেলওয়ের দখলে থাকলে বাণিজ্যিক হিসাবে লাইসেন্স প্রদান করলে প্রতি বছর সর্বনিম্ন ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হতো। ফলে সরকার ওই আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২, পাকশীর অফিস প্রধান মো. আবদুর রহিম এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ (পাকশী) বীরবল মণ্ডল এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী (লালমনিরহাট) মো. আনোয়ার হোসেন অডিট বিভাগকে জবাব প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে পাকশী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সৈয়দপুর কাচারির অধীনে ২০১২ থেকে ২০২০ সালে ১৫ দশমিক ২১৮৩ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত ও নামজারি হয়েছে।

ফিল্ড কানুনগো ৭ নং কাচারি সৈয়দপুর কার্যালয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার ওপর কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষায় দেখা যায় সংশ্লিষ্ট কাচারির আওতাধীন সৈয়দপুর বিমানবন্দর সংলগ্ন নিচু কলোনি নামক স্থানে কলোনি নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত এসএ কেস নং-১/৪২-৪৩ এর মাধ্যমে মোট ৩২টি সিএস দাগে রেকর্ডভুক্ত মোট ১৯ দশমিক ২৪০০ একর ভূমি থেকে ১৫ দশমিক ২১৮৩ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলভূমি সংরক্ষণের অন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এই ভূমি অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি করানো সম্ভব হতো না। এর ফলে লাইসেন্স ফি বাবদ বার্ষিক ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের পক্ষ থেকে অডিট বিভাগকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভ‚মি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় ওই ভূমি রেকর্ড সংশোধনী মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সব খতিয়ান সংগ্রহ করে মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে অডিট কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেছেন, রেলওয়ের এই বিপুল পরিমাণ ভ‚মি এক দিনেই বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি। তা ছাড়া কোনো এলাকার রেকর্ড পূর্ববর্তী মাঠ জরিপ করে তার খসড়া প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে কোনো অভিযোগ না থাকলে মাঠ পর্যায়ের খসড়া জরিপের ভিত্তিতে চ‚ড়ান্ত রেকর্ড গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

এতগুলো প্রক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও এবং উল্লিখিত ভূমি রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বা তদারকির অভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। তাই ভূমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ওই সময়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অডিট বিভাগ এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি পত্র প্রেরণ করলেও কোনো জবাব পায়নি বলে নীরিক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সময়ের আলোকে বলেন, রেলের জমি ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ভুল করে যদি রেলের জমি অন্য কারও নামে রেকর্ড হয়ে যায় তাহলে তা উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে এর সঙ্গে রেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন