ডার্ক মোড
Friday, 19 April 2024
ePaper   
Logo
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিক ফোরাম এখন কোন পথে-২

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিক ফোরাম এখন কোন পথে-২

মোস্তাক মোবারকী

দেশে এখন দুই ফোরাম মিলে প্রায় পাঁচ হাজার সাংবাদিক। এর মধ্যে দুজন সফল সাংবাদিকের কথা উল্লেখ্য করতে হয়। এই দুজন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে শতভাগ সফল। সত্যিকার অর্থেই এরা দুজন ক্লিন ইমেজের সাংবাদিক এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন। একজন আমার সতীর্থ মরহুম শাহ আলমগীর, আরেকজন সাইফুল আলম।

দুজনই দৈনিক জনতায় শুরুতেই আমার সহকর্মী ছিলেন এবং তারা দুজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শাহ আলমগীর ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সফল মহাপরিচালক।

শাহ আলমগীর করতেন ইউনিয়ন পলিটিক্স আর সাইফুল আলম করতেন ক্লাব পলিটিক্স। সাইফুল আলম একজন রিপোর্টার থেকে নিজের যোগ্যতায় এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পত্রিকা যুগান্তরের সম্পাদক হয়েছেন। শাহ আলমগীর ও সাইফুল আলম দুজনেই দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করেছেন।

পেশাগত ও সংসার জীবনেও এরা শতভাগ সফল। এ দুজনই বউভাগ্যবান। স্ত্রীরা তাদের চেয়ে অনেক বেশি বেতন পেতেন।

বউভাগ্যবান কথাটি প্রথম বলেছিলেন সাবেক মন্ত্রী রাজশাহীর সরদার আমজাদ। তিনি আমাদের শতীর্থ কলেজ শিক্ষিকা উৎপলা ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেছেন। সরদার আমজাদ তার দুঃসময়ে স্ত্রী অধ্যাপিকা উৎপলা ভট্টাচার্য্যরে সরকারি বাসায় থাকতেন। বিপদ-আপদে বউয়ের কাছ থেকে ৫/১০ টাকা হাত খরচও নিতেন। তিনি ছিলেন জাতীয় নেতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ সহচর। রাজ্জাকভাইয়ের বাসায় প্রায়ই দেখা হত। ঠাট্টা করে বলতাম আপনি তো ‘বৌ’ ভাগ্যবান।

এখানে আমার প্রশ্ন দুটি, একটি হল:

রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আমাদের যেসব সাংবাদিক নেতা সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী নন তারা কী করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হন? দ্বিতীয়ত: একাত্তরে কুড়ি/বাইশ বছরের যে যুবক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েননি, তারা কী করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হন?

সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হল :

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফোরাম ২০১৬ সালে জাতীয় প্রেসক্লাব পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামধারী ফোরাম জাতীয় প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নিয়েই প্রায় ৫শ জনকে নতুন সদস্য করেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসাংবাদিক। এই কমিটির কৃতিত্ব হচ্ছে- বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদসহ কয়েকজনের সদস্যপদ খেয়ে ফেলা। হারুন রশিদ ছিলেন সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (পিআইও)। এই পদে তিনি দু’দফা দায়িত্ব পালন করেন দক্ষতার সঙ্গে।

অথচ প্রেসক্লাবের ভেতরে ফ্রিডমপার্টির সভায় মেজর হুদার গাড়ির নিচ থেকে যে সাংবাদিক গুলি করেছেন এমন সাংবাদিকের সদস্যপদ এখনো বহাল রেখেছেন। শুধু তাই নয়, সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিক, যারা ৬- দফা ও ১১- দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এমন ত্যাগী সাংবাদিকরা কোনো সুযোগ-সুবিধা কখনো পাননি।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নিয়েই অনিবার্চিত কমিটি গঠন করেই যে নতুন সদস্যপদ দেওয়া শুরু করলেন তাতে ছিল নানা অনিয়ম। মজার ব্যাপার হল জাতীয় প্রেসক্লাবের অনির্বাচিত ওই কমিটিতে জামায়াত-বিএনপির একাংশ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ফোরাম যৌথভাবে কমিটি গঠন করেছে। সেই ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জন এবং বৃহত্তর বরিশালের ৪ জন নেতা ছিলেন। কিন্তু বৃহত্তর ফরিদপুরের একজনকেও নেওয়া হয়নি। ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সদস্য করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

তার পরের অবস্থান বৃহত্তর বরিশালের। কমিটিতে বৃহত্তর ফরিদপুরের কোনো সাংবাদিক না থাকার কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের অনেক সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারেননি। সংগত কারণেই বৃহত্তর ফরিদপুরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সাংবাদিক বেশি। তাছাড়া বৃহত্তর ফরিদপুরের লোকজন মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপোসহীন। এসব কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের সাংবাদিকদের সাইজ করা হয়েছে।

জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ গুরুত্ব দেন। এজন্য আমাদের ফোরামের ‘মহাজনরা’ রুষ্ট। মহাজনদের ভয়: মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্ব পেলে তাঁরা মজাচ্যুত হয়ে যাবেন। এই ভয় থেকেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, দেখে মনে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নামকরা সাংবাদিক নেতাতে আর নেতাতে বাংলাদেশ ভরে গেছে।

ঘুরে ফিরে এরাই নেতৃত্বের চ‚ড়ায় বসছেন এবং বড় বড় সরকারি পদ তাঁরাই বগলদাবা করছেন। দেশে আছেন মাত্র তেত্রিশ জনের মত মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক। এরা কেউই বড় পদে বা বিশেষ সযোগ-সুবিধার ধারে কাছেও যেতে পারেননি। আসলে বলা যায়, যেতে দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের সাংবাদিক সেজে অনেক ধান্ধাবাজ ফোরামে ঢুকে পড়েছে। এদেরই কেউ কেউ মাঝে মধ্যে প্রেসক্লাবের আড্ডায় ‘ফোরামকে নিষ্কলুষ করা দরকার’ মর্মে ফতোয়া দেন।

তাদের ফতোয়া শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাইনা। মনে মনে তখন বলি, এর চাইতেও তো বড় সমস্যা আছে। শুনি: মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগেও এখন ভেজালদের রাজত্ব চলছে। জামায়াত-শিবিররা মহাগণতন্ত্রীর আলখাল্লা পরে ‘মোর ভ্যাটিকান দ্যান রোমানস’ হয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। সরলপ্রাণ জনগণকে দ্বিধা-দন্দ্বে ফেলে দিচ্ছে- কে নকল কে আসল তারা ঠাহোর করতে পারছে না। কী আর করা যায়! মনে মনে বলি, ‘ভুবনেশ্বর হে/মোচন কর জড়বিষাদ/তিমির রাত্রি অন্ধ যাত্রী/ সমুখে তব দীপ্ত দীপ তুলিয়া ধর হে।’

লেখক, সম্পাদক, দৈনিক বঙ্গবাণী, ঢাকা

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন