মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ: সত্যায়নে হাইকমিশনে টালবাহানার অভিযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে। বিরতিহীভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২ লাখ কর্মী গিয়েছে দেশটিতে। মন্ত্রণালয় থেক জানানো হয়েছে, দু-তিনটি কোম্পানীতে কিছু কর্মীর সমস্যা থাকলেও তা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের চেষ্টায় সমাধান করা হয়েছ ।
যদিও চলতি বছরের প্রথম চার মাসের তথ্য বলছে, কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমতির দিকে কর্মী যাওয়ার কার্যক্রমে হঠাৎ এই ছন্দপতনের জন্য হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ি করছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।
নানা কারণ দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদাপত্র বা ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন না করে দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করছেন এই খাতের ব্যবসায়িরা। এতে করে কয়েক হাজার কর্মীর বিদেশ যাওয়া অনিশ্চয়তায় পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা বলেন, সত্যায়নের এই টালবাহানায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া। এতে করে আগ্রহ হারাচ্ছেন দেশটির নিয়োগদাতারা।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, বরিবার (২৮ মে) পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৮০০ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়নের জন্য জমা রয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত বাংলাদেশের একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, হাইকমিশনে সত্যায়নের জন্য জমা দেয়া চাহিদাপত্রের মধ্যে প্রায় ১০ হাজারের মতো রয়েছে যেগুলোর ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে।
এরইমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান গেল বছরের ডিসেম্বরে আবেদন করেও এখন পর্যন্ত তাদের চাহিদার পুরো কর্মীর অনুকূলে সত্যায়ন পায়নি। মালয়েশিয়ার ‘চেনদানা মেওয়াহ রিসোর্সেস’ নামের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত ৯৫০ কর্মীর চাহিদাপত্র হাইকমিশনের সত্যায়নের জন্য জমা দেন। এই সংখ্যার মধ্যে আগেই ৭৫ কর্মী প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত কাজ করছে।
চলতি মে মাসে আরো ৩৫০ কর্মী নেয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের অংশের সব কাজ আগেই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন না দেয়ার কর্মীদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাদের ভিসার মেয়াদ ২ জুন শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি। হাইকমিশনের চাহিদা অনুযায়ী দফায় দফায় সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও সত্যায়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান পর এরইমধ্যে হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে বার্তা দিয়েছেন মন্ত্রী ঐ কর্মকর্তাকে বলেছেন, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের কর্মী চাহিদাপত্র সত্যায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। দীর্ঘদিন এটা ঝুলে রয়েছে। ২ জুন এই কর্মীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, তাই আবেদন সঠিক থাকলে, দ্রুত সত্যায়ন সম্পন্ন করতে বলেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এরপরও সত্যায়ন না করে নানা টালবাহানা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে হাইকমিশনের শ্রমকল্যাণ উইং এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, তার কাছে যেটুকু কাজ থাকে বা ছিল তা আগেই সম্পন্ন করে দিয়েছেন এখন বাকি কাজ যাদের তারা এটা দেখবেন তিনি মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত নন বলেও জানান ঐ কর্মকর্তা এবিষয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এই প্রতিবেদককে জানান, যেহেতু ৯৫০ জনের বড় সংখ্যায় কর্মী নিয়োগের অনুমোদন নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এজন্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে যাতে মালয়েশিয়ায় এসে কোন কর্মী বেকার না থাকে হাইকমিশনার জানান, কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সত্যায়ন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেবেন তিনি
মালয়েশিয়ার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও বায়রার সাবেক নেতা কে এম মোবারাক উল্লাহ শিমুল বলেন, “কর্মী নিয়োগে যেকোনো ত্রুটি হলে বা কর্মীদের কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিই সেই দায় নেয়। আর প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নিজেও বলেছেন ‘ কর্মীদের কোনো সমস্যা হলে দায় বাংলাদেশের এজেন্সি না, হাইকমিশনেরও না, দায় মালয়েশিয়ার।’ তাহলে মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদনের পরও কেন সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হবে? আর এই কর্মীদের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে এছাড়া এই কোম্পানিতে আগেও বাংলাদেশি কর্মীদের গিয়েছে। তারা ভালো আছে, কোন অভিযোগ নেই কর্মীদের”