
বরগুনার শুভসন্ধ্যায় দুর্যোগ মোকাবিলার ১০০ স্বেচ্ছাসেবককে সার্ভাইভাল প্রশিক্ষণ
বরগুনা প্রতিনিধি
শুভসন্ধ্যা সৈকতে তিনদিনের সার্ভাইভাল প্রশিক্ষণে এসেছেন ১০০ নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল। কারো দায়িত্ব তাঁবু তৈরির। কেউবা দায়িত্ব নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকদের নাম অন্তর্ভূক্তির। কেউবা গ্রুপ গঠন কিংবা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য তাঁবু নির্ধারণ করে দিচ্ছেন।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এভাবে বিভিন্ন কাজের মধ্যদিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে সৈকতের প্রশিক্ষণ স্থল।
‘আঁধার, দুর্যোগ, শান্তিতে, স্বেচ্ছাসেবক সবার আগে’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার থেকে তিনদিনব্যাপী অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। দেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এ ধরণের প্রশিক্ষণ এটাই প্রথম। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহায়তায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারী।
বরগুনা জেলা রোভার স্কাউটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিক বিন আনসারী সুমনের সঞ্চালনায় প্রথমদিনের সূচনা অধিবেশনে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত কম্মান্ডো ট্রেনার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জাগোনারীর স্বেচ্ছাসেবক প্রকল্পের কর্মকর্তা সুবীর কুমার কর প্রমূখ। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রথমদিনে গাইডলাইন পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সাথে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন।
স্বেচ্ছাসেবক প্রকল্পের কর্মকর্তা সুবীর কুমার কর বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০০’র বেশি স্বেচ্ছাসেবক বেসিক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০০ জন অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে। বরগুনার পাঁচটি উপজেলা থেকে তালিকাভূক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধাপে বাছাইয়ের মধ্যদিয়ে এই প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ অংশগ্রহনকারী নির্বাচন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫০ জন নারী এবং ৫০ জন পুরুষ।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডো, স্কাউট ও বিএনসিসির অভিজ্ঞ ট্রেনার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও মানবিক কার্যক্রম বিশেষজ্ঞগণ প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করবেন। প্রশিক্ষণ থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগকালের কঠিন সময়ের জন্য শক্তিশালী হওয়ার কলাকৌশল শিখবে। প্রশিক্ষণটি ভাবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। যাতে তারা দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এবং দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে।
জাগোনারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, করোনা মহামারীর জরুরি সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে জাগোনারী। এ প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দক্ষ প্রশিক্ষকগণের সরাসরি তত্বাবধানে দুর্যোগ মোকাবিলার বাস্তবভিত্তিক কলাকৌশলগুলো শিখতে পারবে স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের গুরুত্বও বেড়েছে অপরিসীম। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী সাইক্লোনের পর থেকে বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের প্রসার ঘটে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে।