
প্রশাসনে স্বৈরাচারের অনুগতরা দেশ চালানোর চেষ্টা করছে: আব্দুস সালাম
নিজস্ব প্রতিনিধি
যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক করতে চায়, তারাই দেশের ষড়যন্ত্রকারী, তারাই ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন পিছিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, প্রশাসনে স্বৈরাচরের অনুগতরাই দেশ চালানোর চেষ্টা করছে। তাদের দায়িত্বে রেখে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে না।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নওগাঁর মান্দা উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিতাড়িত হলেও প্রশাসনে তার অনুগতরা এখনো দেশে রয়ে গেছে। তারাই বিভিন্ন জায়গায় বসে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে। আমরা প্রথম থেকেই বলছি, তাদের এভাবে রেখে এ সরকার সফল হবে না। এদের দায়িত্বে রেখে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আসবে—সেটি চিন্তা করা যায় না। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করে তারা প্রমাণ করতে চাচ্ছে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এটি একটি ষড়যন্ত্র।’
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে আব্দুস সালাম বলেন, ‘আগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিএনপির ভয়ে ভোট দিত না। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর যখন দেশের জনগণ, এমনকি সব রাজনৈতিক দল বলে—নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, তখন বিএনপি যেন ক্ষমতায় যেতে না পারে, সেজন্য ভোট দেওয়া যাবে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার চিন্তা আর এখনকার চিন্তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশ চালাতে পারলে সীমান্ত রক্ষা, অনুপ্রবেশ ঠেকানো, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা, বেকার সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু আপনারা ঢাকা শহরের ট্রাফিক সমস্যা সমাধান করতে পারেন না—দেশ চালাবেন কীভাবে?’
আব্দুস সালাম বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের জন্মই হয়েছিল আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। হাজার চেষ্টা করেও কেউ বিএনপিকে হারাতে পারেনি, এখনো পারবে না। দেশে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট করতে হবে। গণতন্ত্র জনগণ ও রাজনীতিবিদদের হাতে দিতে হবে। এ সরকারের সফলতা তখনই, যতক্ষণ না একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি রাজনীতির মাঠে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, এখনো করছে। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারপরও আমরা ধৈর্য ধরে আছি। আজকে অনেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মিলাতে চান। বিএনপি আর আওয়ামী লীগ এক নয়। যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বিএনপি সফল হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারো কারণে দলের দুর্নাম হয়—এমন কাজ করবে না। যারা অন্যায়-অপকর্ম করছে, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আবারও আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনে জিততেও হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন, আমরা তার। নওগাঁয় প্রত্যেকটা সিটে ধানের শীষের প্রার্থীকে জেতাতে হবে।’
এর আগে বিকেল ৪টার দিকে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আলিম। বিশেষ বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মান্দা উপজেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি এম. এ. মতিন, সাবেক আহ্বায়ক নজমুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরী প্রমুখ।
কাউন্সিলের আগে সভাপতি পদে এম. এ. মতিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরীকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করা হয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন সামসুল আলম বাদল ও বিশ্বজিৎ সরকার। ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৯৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৯৩০ জন ভোট দেন।